সাইবেরিয়ার গভীরে অবস্থিত একটি কৌশলগত বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ার পারমাণবিক বোমারু যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে এই হামলা কিয়েভের পক্ষে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রোববার (১ জুন) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রুশপন্থি একাধিক সামরিক ব্লগার দাবি করেছেন- ইরকুৎস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে ঘাঁটিতে আগুন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়, যেখানে রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমান টিউ-৯৫ ও টিউ-২২এম অবস্থান করছিল।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ দাবি করেছে, তারা এই হামলার পেছনে রয়েছে। সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ৪০টিরও বেশি রুশ সামরিক বিমান এই হামলার লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে রয়েছে টিউ-৯৫ বিয়ার এবং টিউ-২২এম ব্যাকফায়ার বোমারু বিমান- যেগুলো থেকে রাশিয়া নিয়মিত ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এসবিইউ কর্মকর্তার ভাষ্য, এই হামলার মাধ্যমে আমরা সেই বিমানগুলোকে লক্ষ্য করেছি, যেগুলো আমাদের বেসামরিক স্থাপনায় ধ্বংস নামিয়ে এনেছে।
রাশিয়ার ইরকুৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগোর কোবজেভ হামলার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানান, উসোলস্কি জেলার স্রেদনি গ্রামের কাছের একটি সামরিক ইউনিটে ড্রোন হামলা হয়েছে। যদিও তিনি সরাসরি বেলায়া বিমানঘাঁটির কথা বলেননি, তবে আকাশে ড্রোনের শব্দ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলির কথা উল্লেখ করেছেন।
কোবজেভ আরও বলেন, সাইবেরিয়ায় এই প্রথমবার ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে কতগুলো ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো একটি ট্রাক থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের এই হামলা সামরিক কৌশলের এক নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। যুদ্ধের সরাসরি ফ্রন্টলাইন থেকে সাইবেরিয়ার মতো রাশিয়ার গভীর অভ্যন্তরে এমন একটি কৌশলগত হামলা আগে কখনো ঘটেনি। এটি ইউক্রেনের ড্রোন প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতি এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার একটি অঞ্চলে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সাতজন নিহত হন। ঘটনার পরপরই বেলায়া বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের এই হামলার ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন।
যদিও তিনি মস্কো ও কিয়েভকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পেরেছিলেন, কিন্তু সেই আলোচনার কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরই মধ্যে এই ধরনের কৌশলগত হামলা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের হামলা যুদ্ধের মাত্রা পাল্টে দিতে পারে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন ধরনের হামলা বা প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে- এই হামলার পর রাশিয়া কী পদক্ষেপ নেয়। কারণ এই উত্তেজনা যদি অতিক্রম করে কোনো ‘লাল রেখা’, তবে তা হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনাও ডেকে আনতে পারে।
মন্তব্য করুন