পাল্টা আক্রমণের মধ্যেই শক্তি হারাচ্ছে ইউক্রেন। পাশে থেকে সরে যাচ্ছে কট্টর মিত্রদেশও। সম্পর্কের টানপোড়েনের মধ্যেই ইউক্রেনের পাশ থেকে সরে গেছে পোলান্ড। এমনকি অস্ত্র সহায়তা বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
শস্যচুক্তি নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে পোলান্ড-ইউক্রেন। গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের শস্যচুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা আর মেয়াদ বাড়ায়নি জোট। তবে নিজ দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে পোলান্ডসহ তিন দেশ ইউক্রেনের শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিওটিও) মামলা করে ইউক্রেন। এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
উত্তেজনার মধ্যে পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হবে না। এর বদলে দেশটি নিজেদের অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করবে। দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, কিছু দেশ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
জেলেনস্কির এমন মন্তব্যের ক্ষুব্ধ হয় পোলান্ড। দেশটি ইউক্রেনের এমন অভিযোগকে অযৌক্তিক নিন্দা বলে প্রতিবাদ জানায়। এ ছাড়া ওই ঘটনায় মঙ্গলবার পোলান্ডে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সরকার।পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বুধবার এক টেলিভিশনে বলেন, শস্য আমদানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা আর ইউক্রেনে অস্ত্র হস্তান্তর করছি না। আমরা এখন পোল্যান্ডকে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাজাচ্ছি।
এর আগে ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে তিন দেশের বিরুদ্ধে মামলা করে ইউক্রেন। দেশ তিনটি হলো স্লোভাকিয়া, পোলান্ড ও হাঙ্গেরি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ইউক্রেন এ মামলা করেছে। এর আগে গত শুক্রবার এ তিন দেশ রাশিয়ার শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশগুলোর দাবি, সস্তা দামে শস্য আমদানি থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে এমন নিষেধাজ্ঞার দরকার ছিল।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। ফলে কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। দেশটি বিকল্প হিসেবে স্থলপথের বিভিন্ন রুট দিয়ে শস্য রপ্তানি করে আসছে। এর ফলে সেন্ট্রাল ইউরোপের বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইউক্রেনের শস্য ঢুকতে থাকে। কৃষকদের অভিযোগ, ইউক্রেনের এমন চালানের কারণে স্থানীয় বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এ জন্য তারা প্রতিবাদ ও র্যালিও করেছেন।
কৃষকদের এমন চাপের মুখে চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ব্লকের ২৭ দেশ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে এ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা আর বাড়ায়নি ইউনিয়ন। অন্যদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পৃথকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয় তিন দেশ।
মন্তব্য করুন