

একটি সাদামাটা হলঘরে ডজনখানেক মানুষ বসে আছেন। আলো-আঁধারির মাঝে সবার চোখ স্থির সামনের স্ক্রিনে। সেখানে একের পর এক ভেসে উঠছে পচে-গলে যাওয়া, বিকৃত মরদেহের ছবি। দৃশ্যটি গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের।
এই হলঘরে আসা প্রতিটি পরিবার জানেন গাজায় এখন ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জাম নেই। তাদের প্রিয়জনকে শনাক্ত করার একমাত্র উপায় হলো এই স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা। তারা খুঁজছেন একটি চেনা অঙ্গ বা পোশাকের অংশ, যা হয়তো বলে দেবে- এই দেহাবশেষ তাদেরই নিখোঁজ প্রিয়জনের। এ এক নিদারুণ যন্ত্রণাভরা প্রক্রিয়া, তবুও এর কোনো বিকল্প নেই।
গাজা বাইরে তখনো মৃত্যু ও ধ্বংসের তাণ্ডব। ইসরায়েলের ফেলা অগণিত অবিস্ফোরিত বোমা গাজাজুড়ে ছড়িয়ে, যা খেলার মাঠে থাকা ছোট ছোট শিশুর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। নিজ ভূমিতে, নিজ ঘরে, এমনকি এক মুঠো খাবারের সন্ধানে যেতে গিয়েও আহত হয়ে ফিরছে গাজার প্রতিটি প্রাণ।
এই চরম অবস্থার মধ্যেই পরিবারের সদস্যরা এসেছেন তাদের প্রিয়জনদের শেষ বিদায় দিতে, তাদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করতে। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে আনুমানিক ১০ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি বা স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
অন্যদিকে, জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি এখনো ইসরায়েলি হেফাজতে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা কেউ জানে না। যুদ্ধবিরতি থাকলেও ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের কারণে নতুন ফরেনসিক সরঞ্জাম যেমন ডিএনএ পরীক্ষার যন্ত্র গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে মরদেহ শনাক্ত করার এই প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন