প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন বাবা। মায়ের প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে চলেছে সংসার। কিন্তু ছেলে স্কুলে যেতে শিখেছে। স্কুলের খরচ মেটানো প্রতিবন্ধী মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই শিশু ছেলেকেই নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হয়। এজন্য শিশুটি রাস্তায় রাস্তায় পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করেন। আবার হোটেল- রেস্তোরাঁয় খণ্ডকালীন চাকরিও করেন।
সীমাহীন ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মধ্যেও লেখাপড়া ছাড়েনি শিশুটি। ধাপে ধাপে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেন। নাম লেখান রাজনীতিতে। অবশেষ বাবার ফেলে যাওয়া সেই ছেলেটি এখন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনে জেতার তেমন কোনো সম্ভাবনাই ছিল না অ্যান্থনি অ্যালবানিজের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে খেল দেখালেন তিনি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ক্ষমতার মসনদে থাকা অ্যালবানিজের জীবন নাটকের কোনো অংক বললেও ভুল হবে না। ৬২ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের শৈশব কেটেছে সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে। মাথার ওপর ছিল না বাবার ছায়া। আর মা থেকেও যেন ছিল দূর কোনো দ্বীপের বাসিন্দা।
অ্যালবানিজের জন্ম ১৯৬৩ সালে, সাদামাটা এক পরিবারে। সিডনির ডার্লিংহার্স্ট এলাকার একটি সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে জন্ম নেন তিনি। টিনের ছাউনির নিচে ছিল টয়লেট। থাকার জায়গাও ছিল অপর্যাপ্ত। অথচ ভাগ্য তাকে কোথায় তুলে আনল!
অ্যালবানিজের মা ম্যারিয়ান এলিরি ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। একাই বড় করেছেন ছেলেকে। এলিরি অস্ট্রেলীয় হলেও তার স্বামী ছিলেন ইতালীয় বংশোদ্ভূত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর আর কখনোই ফিরে আসেননি অ্যালবানিজের বাবা। তাই সংসার চলত অভাব-অনটনে। প্রতিবন্ধী ভাতা ও সীমিত সরকারি সহায়তাই ছিল একমাত্র ভরসা।
অভাবে দিন কাটালেও ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল অ্যালবানিজের মায়ের। আর মায়ের সেই স্বপ্নই হয়ে ওঠে অ্যালবানিজের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ক্যাম্পারডাউনের স্কুলে হাতেখড়ি হয় অ্যালবানিজের। পরে ভর্তি হন সেন্ট মেরিজ ক্যাথলিক কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিক্রি করেন পত্রিকা। একপর্যায়ে লেখাপড়ার খরচ চালাতে হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও নেন খণ্ডকালীন কাজ। পরিবারের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েই করেন বাজিপাত। ১৯৮৪ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অ্যালবানিজ।
মধ্য-বামপন্থার রাজনীতিতে বিশ্বাসী অ্যালবানিজ ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। নিজের এলাকায় গ্রেইন্ডলার আসন থেকে নির্বাচিত হয়েই শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। সেই শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সরকারি অনুদানের ফ্ল্যাটে বেড়ে ওঠা সেই ছেলেটিই ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও অনন্য ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন অ্যালবানিজ। তিনিই দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দিয়েছিলেন বাগদানের ঘোষণা।
মন্তব্য করুন