ভূমিকম্প, পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিকর এবং ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বে এ যাবৎকালে ভূমিকম্পে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও অসংখ্য স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রযুক্তি নানা ক্ষেত্রে অনেকদূর এগোলেও ভূমিকম্পের আগাম বার্তা কিংবা ভয়াবহতা রোধে এখনো খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে থামানো যাচ্ছে না প্রাণহানি। রিখটার স্কেলে ক্রমানুসারে গত ১০০ বছরে আঘাত হানা ভয়াবহ ১০টি ভূমিকম্প সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ।
১৯০০ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ভূমিকম্পের রেকর্ড রাখা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা-ইউএসজিএস। বিশ্ব ইতিহাসের এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৬০ সালে চিলির বিওবিও প্রদেশে। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ৬৫৫ জন মানুষ এবং বাড়িঘর ভাঙার জেরে আশ্রয়হীন হন আরও ২০ লাখ মানুষ।
দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ১৯৬৪ সালে। ৯ দশমিক ২ মাত্রার সেই ভূমিকম্প এবং তার জেরে সৃষ্ট সুনামিতে নিহত হয়েছিলেন ১৩০ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ২৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
তৃতীয় ভূমিকম্পটি হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ২০০৪ সালে। ৯ দশমিক এক মাত্রার সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন ১০ লাখ ১০ হাজার জন।
চতুর্থ ভূমিকম্পটি হয়েছিল জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে ২০১১ সালে। ৯ দশমিক ১ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি।
পঞ্চম ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৫২ সালে রাশিয়ার কামচাটকা ক্রাই উপদ্বীপে। এটি ছিল বিশ্বে রেকর্ডকৃত প্রথম ৯ মাত্রার ভূমিকম্প, যার ধাক্কা এসে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত। ভূমিকম্পের জেরে হাওয়াইয়ে ব্যাপক সুনামিও হয়েছিল। তবে এই ভূমিকম্পে প্রাণহানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ষষ্ঠ ভূমিকম্পটি হয়েছিল ২০১০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দেশ চিলির বিওবিও প্রদেশের কিউরিহিউ শহরের কাছে। ৮ দশমিক ৮ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ৫২৩ জনের, ধ্বংস করেছিল ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।
সপ্তম ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯০৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের এসরোলডাস শহরে। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ১ হাজার ৫০০ মানুষের।
অষ্টম ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের র্যাট দ্বীপে ১৯৬৫ সালে এবং সেটির মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। তবে সেখানে জনবসতি না থাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
৯ম স্থানে আছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলে ১৯৫০ সালে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। আসাম এবং তিব্বত অঞ্চলেও এর কম্পণ তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল বলে এটি আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। ব্যাপক কম্পন, ভূপৃষ্ঠ ফাটল এবং বিশাল এলাকাজুড়ে ধসের জেরে সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৮০ জন।
১০ম স্থানে রয়েছে ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। সেই ভূমিকম্পে পুরো সুমাত্রাজুড়ে ব্যাপক ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। হাতে গোনা যে কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।
মন্তব্য করুন