পাকিস্তানে দূতাবাসের কর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, লাহোরে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (০৮ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাহোরে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট তাদের সকল কর্মীকে ‘সেল্টার ইন প্লেস’ বা নির্দিষ্ট স্থানে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনার পেছনে কারণ হিসেবে ‘ড্রোন বিস্ফোরণ’ এবং লাহোর ও তার আশপাশে ‘সম্ভাব্য আকাশসীমা লঙ্ঘন’-এর রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কনস্যুলেট প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে যে কর্তৃপক্ষ লাহোরের প্রধান বিমানবন্দরের আশেপাশের কিছু এলাকা খালি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, লাহোরে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের প্রতি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন ‘সক্রিয় সংঘাতের এলাকায়’ থাকলে নিরাপদে প্রস্থানের চেষ্টা করেন। যদি তা সম্ভব না হয় তবে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে নির্দেশনা দিয়েছে দূতাবাস।
এর আগে আইএসপিআর জানিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী গত রাত থেকে ভারতের পাঠানো ২৫টি ইসরায়েলি হ্যারোপ ড্রোন ধ্বংস করেছে। সামরিক বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, টেকনিক্যাল সফট-কিল এবং অস্ত্রনির্ভর হার্ড-কিল পদ্ধতি ব্যবহার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের পাঠানো এসব ড্রোন সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে।
আইএসপিআর আরও দাবি করেছে, গত ৬ মে ভারতের বিমান হামলার জবাবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ৫টি আধুনিক যুদ্ধবিমান, একাধিক ড্রোন এবং সেনাসদস্য নিহত হওয়ায় দেশটি আতঙ্কিত হয়ে এই ড্রোন হামলা চালায়। সামরিক সূত্রে বলা হয়, ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের জবাব পাকিস্তান সর্বদা দৃঢ়ভাবে দেবে।
এর আগে বুধবার (০৭ মে) ব্রিবিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সীমান্তের একেবারে ধারঘেঁষে অবস্থিত সালামাবাদ গ্রামমে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সকালে সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ফলে গ্রামটির প্রায় পুরোটাই খালি হয়ে গেছে। বিবিসির প্রতিনিধি দল সালামাবাদ পৌঁছে দেখতে পান—এই গ্রাম এখন যেন এক ভুতুড়ে জনপদ।
বিবিসি জানিয়েছে, সকালবেলায় ছোঁড়া আর্টিলারি শেল বিস্ফোরণে একাধিক বাসিন্দা আহত হন। তাদের বারামুলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পর গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া ও ছাই। বহু বাড়ি এখনো জ্বলছে, কিন্তু তাদের কেউ আর পাশে নেই।
গ্রামের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী বশির আহমদ বলেন, গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ পালিয়ে গেছে। সরকার কিছু জানায়নি, জানলে আগেই চলে যেতাম। ওরা জানত গোলাবর্ষণ হতে পারে, তবুও আমাদের ফেলে রেখেছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানের ৬টি এলাকায় ২৪টি বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরিদকে, শিয়ালকোট, শকরগড় এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের কোটলি ও মুজাফফরাবাদে হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই-তিন বছর বয়সী একটি শিশু মেয়ে, সাতজন নারী ও চারজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ নারী ও ২৮ পুরুষ।
এদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি যুদ্ধ ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। আইএসপিআরের ডিজি বলেন, শত্রুর আগ্রাসনের জবাবে প্রতিরক্ষামূলকভাবে আমরা ৩টি রাফায়েল জেট, একটি মিগ-২৯, একটি এসইউ বিমান এবং একটি হেরন যুদ্ধ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছি।
তিনি জানান, জম্মু, আখনুর ও শ্রীনগরের সাধারণ এলাকাগুলোতে একটি করে বিমান এবং অবন্তীপুরে দুটি বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন