দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। রোববার (০৩ মার্চ) জাতীয় পরিষদে সদস্যদের ভোটাভুটিতে দেশটির ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। এরপরই জাতির জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নির্বাচিত হয়েই অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনিয়ন্ত্রিত ঋণের মাধ্যমে যে সংকট রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা হবে।
গ্যাস বিদ্যুতের দাম নিয়েও কথা বলেছেন শাজবাজ। তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ গ্যাস ও বিদ্যুতের আকাশচুম্বী দামের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও ট্যাক্স চুরি পাকিস্তানের জন্য জীবনমরণের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বলতে চাই যে, সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমরা এ ক্যান্সারের শিকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলব। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা তৈরি করব।
তিনি বলেন, এটা কঠিন […] বাধা-বিপত্তিতে ভরা একটি দীর্ঘ এবং কণ্টকাকীর্ণ যাত্রা এটি। কিন্তু যেসব দেশ এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে তারা বিশ্বের সবচেয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
শাহবাজ বলেন, গরিবেরা বিদ্যুৎ ও ট্যাক্স চুরির বোঝা বয়ে চলেছে। তিনি ট্যাক্স চুরি ঠেকানো ও তদারকি করতে প্রযুক্তিগত মডেল আনার ঘোষণা দেন যেটি মানব সৃষ্ট ত্রুটি দূর করবে। এতে করে মূল্যস্ফীতি কমবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দেশ আগায়ে যাবে।
কৃষকদের জন্যও প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন শাহবাজ। তিনি বলেন, তার সরকার কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দেবে এবং সোলার টিউবওয়েল বসানোর জন্য দ্রুত প্যাকেজ ঘোষণা করবে।
দেশের বিনিয়োগ বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ আনা হবে এবং এমন এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ঘোষণা করা হবে যা প্রবৃদ্ধি ঘটাবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়। নির্বাচনে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৪টি আসন পেয়েছে। তবে এই নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এ জন্য জোট সরকার গঠন করতে শুরু থেকেই পিপিপি ও অন্য সমমনা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন পিএমএল-এন নেতারা। একপর্যায়ে ৬টি দলের একটি জোট গঠন করে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। তাই নির্বাচনে জয়ী পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দেন। মূলত জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ভাগ পেতে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেয় পিটিআই।
নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়েও পিএমএল-এন থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে বারবার নওয়াজ শরিফের নাম উঠে আসছিল। তবে নির্বাচনের পরে হঠাৎ করে এই দৌড় থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের নাম ঘোষণা করেন নওয়াজ। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খানের জোট সরকার বিদায় নিলে শাহবাজের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে। ওই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এবারও পাকিস্তানে এই ধরনের একটি জোট সরকার গঠন হতে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন