শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৬ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির বিকল্প নেতৃত্বে নিম্ন-মধ্যম সারির নেতা

নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জহির উদ্দিন স্বপনকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: কালবেলা
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জহির উদ্দিন স্বপনকে শুক্রবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: কালবেলা

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘাত ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, ফের একতরফা নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলকে মাঠশূন্য করতে তাদের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিনিয়র থেকে শুরু করে তৃণমূলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় নেতারাও গ্রেপ্তার থেকে বাদ যাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতৃত্ব দিতে পারেন—এমন অন্য নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় কৌশল অবলম্বন করে আছেন। এহেন অবস্থায় বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে কি না—এমন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বলছে, চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে অনেকটা চ্যালেঞ্জে পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। অবশ্য চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিতে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে হাল ধরছেন দলের অপেক্ষাকৃত মধ্যম ও নিম্ন সারির নেতারা। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করায় সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির অধস্তন নেতাদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপি যখন তাদের ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের’ কর্মসূচি পালন করছে, তখন সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার বা আত্মগোপন নতুন করে দলটির জন্য সংকট তৈরি করছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও বিএনপি নেতাদের দাবি, গ্রেপ্তার বা মামলায় সাজা দিয়ে অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো হলেও তাতে দলের অভ্যন্তরে কোনো সংকট তৈরি হবে না। কারণ তারা মনে করেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে এবং কেউ গ্রেপ্তার হলে বিকল্প নেতারাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন ও নিচ্ছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, একদফার চূড়ান্ত আন্দোলন ঘিরে ধরপাকড় ও নেতৃত্ব সংকটে ফেলা হবে—এমনটি আমাদের জানাই ছিল। এজন্য আগে থেকেই দল প্রস্তুত আছে। সে কারণে নেতাদের গ্রেপ্তার কিংবা শাস্তিতে দলে সংকট হবে না। বরং আন্দোলনর মাধ্যমেই আটক নেতারা বেরিয়ে আসবেন।

জানা গেছে, সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোট নিয়ে আন্দোলন শুরু করে গত ১২ জুলাই। এরপর টানা তিন মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে রোডমার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এরপর গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা।

সর্বশেষ যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার জনসমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আবারও মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপির যেসব শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার: জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের আগে থেকেই শুরু হওয়া গ্রেপ্তার অভিযানে ঢাকাসহ সারা দেশে এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, বিলকিস জাহান শিরিন, মো. আমিনুল হকসহ অনেকে।

এ ছাড়া ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের আগেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আলী আকবর চুন্নু ও নরসিংদী জেলা ছাত্রদল সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ।

সারা দেশে হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, জনগণের রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন, দেশের ৯৫ শতাংশ জনমত এবং জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা আবারও আরেকটি একতরফা পাতানো নির্বাচন আয়োজনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার সাজানো দলদাস পুলিশ-প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিরোধী দল-মত উচ্ছেদ করে পুরোনো কায়দায় নতুন কোনো ফর্মুলায় ভোটরঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য। তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি পালনকালে ও পালনের পরে পুলিশ নানা অভিযোগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও নানা নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু করেছে।

মধ্যম সারির নেতারা আসছেন নেতৃত্বে: এদিকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের সভাপতি বা সাধারণ কিংবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব গ্রেপ্তার হচ্ছেন, সেখানে সংশ্লিষ্ট কমিটির পরবর্তী নেতাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান কারাগারে থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, লিটন মাহমুদকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব ফুটবলার আমিনুল হক কারাগারে থাকায় যুগ্ম আহ্বায়ক এ জি এম শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন গ্রেপ্তার হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়েছেন ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর। নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন কারাগারে থাকায় সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী কারাগারে থাকায় যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন গ্রেপ্তার হওয়ায় সদস্য মো. আব্দুস সালামকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কারাগারে থাকায় সহসভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

নেতৃত্বে সংকট হবে না: বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন কালবেলাকে বলেন, বিএনপি কোনো ভুঁইফোঁড় রাজনৈতিক দল নয়। যত নির্যাতন-নিপীড়ন আসুক, বিএনপির নেতৃত্বের কোনো সংকট হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে খোলা হলো হিটস্ট্রোক সেন্টার

জমি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে কুপিয়ে জখম

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন, স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

ঢাবির জিয়া হলে শিক্ষার্থীরাই বসালেন ঠান্ডা পানির মেশিন

আ.লীগের সম্পত্তি ক্রোকের প্রস্তাব করবে আপ বাংলাদেশ

কলেজের অর্থ আত্মসাৎ করে লন্ডনে পাড়ি জমালেন শিক্ষক দম্পতি

তরুণদের আদর্শ হবে শহীদদের ত্যাগ : চসিক মেয়র

আখাউড়ায় বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু

বিবিসির বিশ্লেষণ / তুরস্ক কেন প্রকাশ্যে ভারতের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে?

১০

সমাজে ভারসাম্যের জন্য কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই : নূরুল ইসলাম বুলবুল 

১১

ইউনাইটেড হাসপাতালের ৩০ কোটি টাকা কর বকেয়া : ডিএনসিসি প্রশাসক

১২

চট্টগ্রামে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞদের মিলনমেলা

১৩

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এবি পার্টির আনন্দ মিছিল

১৪

পুলিশকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ফের অটোরিকশার দাপট চট্টগ্রামে

১৫

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল খেলাফত মজলিস

১৬

স্থানীয় সরকারকে সংসদীয় ব্যবস্থার আদলে সাজানোর পরামর্শ সংস্কার কমিশন প্রধানের

১৭

দেশে কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতি হবে না : আমীর খসরু

১৮

রাজনীতিবিদদের এখন সংস্কার নিয়ে আগ্রহ নেই : সংস্কার কমিশনের প্রধান

১৯

গোসলের সময় বজ্রপাতে প্রাণ গেল যুবকের

২০
X