নিবন্ধনের জন্য শর্টলিস্টে থাকা ১২টি রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেজন্য অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এ-সংক্রান্ত সাব-কমিটি। ফলে ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী জুনের মধ্যে আর রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন শেষ হচ্ছে না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে এ নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হতে পারে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, দলগুলোর নিবন্ধন পেতে হলে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করতে হবে। শর্ত তিনটি হলো—এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত যে কোনো সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীকে একটি আসন পেতে হবে; দুই. কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে; আর তিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দুটি শর্ত পালন করা নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য বেশ কঠিন। সেজন্য তৃতীয় শর্তকেই প্রাধান্য দেয় আবেদন করা দলগুলো। আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র বা তথ্যের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের তথ্যের মিল রয়েছে কি না, সেটি জানতে ইতোমধ্যে ইসির শর্টলিস্টে থাকা ১২টি রাজনৈতিক দলের মাঠ তদন্ত করা হয়েছে। তবে দলগুলোর মাঠপর্যায়ের এসব প্রতিবেদনে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইসি। সেজন্য এসব প্রতিবেদন অধিকতর তদন্তের নির্দেশনা দিয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত বছর ২৬ মে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর ইসির নিবন্ধন পেতে মোট ৯৮টি দল আবেদন করে। এর মধ্যে পাঁচটি দল একাধিক আবেদন করায় সেগুলো বাদ দিয়ে আবেদনকারী দলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩টিতে। সেখান থেকে আবার দুটি দল তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে। আর নানা অসংগতি ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা না দেওয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৪টি দলের আবেদন বাতিল করা হয়। বাকি ৭৭টির আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইসি সচিবালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন শেষে যেসব দলের সম্পূরক বা যেসব কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে, তা জমা দিতে ১৫ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। গত ২৬ জানুয়ারি সেই সময়সীমাও শেষ হয়। ইসির চিঠিতে সাড়া না দেওয়ায় ৩১টি দলের আবেদন বাতিল হয়। বাকি ৪৪টি দল থেকে শর্টলিস্টে ১২টি দল টিকে যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এসব দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য তদন্ত করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ইসির স্থানীয় কার্যালয়গুলো। গত রোববার এসব দলের সেই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে ইসি। এ সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের তথ্যে গরমিলের চিত্র ফুটে ওঠে প্রতিবেদনে। কাগজ-কলমে কার্যালয় থাকলেও বাস্তবে কয়েকটি দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শর্ত অনুযায়ী দলগুলো উপজেলা পর্যায়ে যে ২০০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, কয়েকটি দলের ক্ষেত্রে তারও বাস্তব চিত্র মেলেনি। ফলে প্রতিবেদনগুলো গ্রহণ না করে পর্যায়ক্রমে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিবন্ধন বাছাই কমিটির পাশাপাশি একটি সাব-কমিটি বর্তমানে প্রতিবেদনগুলোর আরও অধিকতর তদন্ত করছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের এমন প্রেক্ষাপটে রোডম্যাপ থেকে খানিকটা সরে এসেছে ইসি। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী জুনের মধ্যে দলগুলোর নিবন্ধনের কথা থাকলেও এ মাসের মধ্যে আর সেটি হচ্ছে না। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী মাসে দলগুলোর নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসি।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বাছাই কমিটির প্রধান ও ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, নিবন্ধনের তালিকায় থাকা দলগুলোর মাঠপর্যায়ের তথ্য আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করি, আগামী মাসে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কমিশন।
মন্তব্য করুন