রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিদিন লাখো মানুষের আনাগোনা, কর্মচাঞ্চল্য ও স্বপ্নের ঠিকানা। কিন্তু এ শহরের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে একটি নীরব ঘাতক ফিটনেসবিহীন গাড়ি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নয়। এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি রাজধানীসহ সারা দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব গাড়ি সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করছে। পুরোনো বডি, ভাঙা হেডলাইট, ত্রুটিপূর্ণ ব্রেক, ভাঙা সিট এরকম অসংখ্য ত্রুটি নিয়ে যখন এ গাড়িগুলো রাস্তায় নামে, তখন সেগুলো আর সাধারণ যানবাহন থাকে না, হয়ে ওঠে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদিও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এই ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে যাত্রী কিংবা পথচারী যেমনি প্রাণনাশের আশঙ্কায় পড়ে, তেমনি এর চালক ও সহকারীরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। হঠাৎ ব্রেক ফেল করা, লক্কড়ঝক্কড় বডি, চাকা ফেটে যাওয়া—এ ধরনের অহরহ ঘটনা ঘটছে; যার ফলে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককে এবং তাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
ট্রাফিক পুলিশের অনৈতিক অর্থ লেনদেন, দায়সারা মনোভাব, রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা, সড়কপথে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে সড়কপথে আনফিট গাড়ি চলাচল বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
করণীয় কী? এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দরকার বিআরটিএসহ সাধারণ যাত্রীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন।
দুর্নীতিমুক্ত ফিটনেস প্রক্রিয়া: গাড়ির ফিটনেস প্রদানের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। অনৈতিক অর্থ লেনদেন পরিহার করে সৎ ও যোগ্যভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অবস্থান: ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। প্রয়োজনে এসব গাড়ির চালক ও মালিকদের শাস্তির আওতায় এনে সড়কে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়মিত তদারকি: বিআরটিএর উচিত নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ত্রুটিপূর্ণ গাড়িগুলোকে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা।
জনসচেতনতা সৃষ্টি: জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অনেকাংশেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। লিফলেট-ব্যানারের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে ফিটনেসবিহীন গাড়ির ভয়ংকর দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।
রাজধানীর সড়কপথগুলোকে নিরাপদ করতে এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির বেপরোয়া ভাব থামাতে সরকারের সঙ্গে সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না, দেশের উন্নয়নের অন্তরায়ও বটে। সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়, কোনো ব্যক্তি যেন তার প্রিয়জনকে না হারায়, কোনো পরিবার যেন নিঃস্ব না হয়, এটাই সবার প্রত্যাশা। ফিটনেসবিহীন গাড়িমুক্ত সড়কই হোক আজকের অঙ্গীকার।
আশিকুর রহমান আজিম
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
মন্তব্য করুন