জাহাঙ্গীর মাহমুদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষকের জমি, সরকারি খাল দখল করে আবাসন প্রকল্প

ইস্টউড সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ
কৃষকের জমি, সরকারি খাল দখল করে আবাসন প্রকল্প

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার নরাব, কাঞ্চন ও আমলাবোসহ কয়েকটি এলাকায় ১৬ বছর আগে ‘পূর্বাচল ইস্টউড সিটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষকের জমি ক্রয়, কৃষক জমি দিতে না চাইলে জোর করে বালু ভরাট করা হতো। পরে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা নামমাত্র মূল্যে কোম্পানির কাছে জমি বিক্রি করে দিতেন। এ ছাড়া সরকারি ছয়টি খাল দখল-ভরাট এবং ভুয়া দলিল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। পূর্বাচল ইস্টউড সিটির প্লট কিনে গ্রাহকরাও পড়েছেন বিপাকে। এক যুগের বেশি পেরিয়ে গেলেও তাদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পূর্বাচল ইস্টউড সিটির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ২৬ মে ইস্টউড সিটির অনুমোদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এ ছাড়া ভুক্তভোগীরা আবাসন কোম্পানিটির অনুমোদন বাতিল চেয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। একই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা জমি না দিলেই শুরু হতো তাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও বিভিন্ন হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা। তারা বলছেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত ছয়টি সরকারি খাল পর্যন্ত দখল করা হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে বর্ষা মৌসুমে চরম ভোগান্তিতে থাকেন এলাকার ২০ হাজার মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, ইস্টউড আবাসন কোম্পানির মালিক কামাল উদ্দিন এ প্রকল্পে জমি কেনেন মোট ৭২ দশমিক ৬৭ একর। অথচ সরকারিভাবে আবাসন কোম্পানিটি ভুয়া দলিল ও নামজারি দেখিয়ে অনুমোদন নেয় প্রায় ১৪৮ একর জমির। তারা আমলাবো মৌজায় মাত্র ২৬ শতাংশ জমি কিনলেও ভুয়া দলিল ও নামজারি দেখিয়ে অনুমোদন নেয় ৮ একর। নরাব মৌজায় ৫০ দশমিক ১৮ একরের অনুমোদন নিলেও আবাসন প্রকল্পটি জমি কিনেছে মাত্র ২৭ একর। একইভাবে কাঞ্চন মৌজায় ৯০ দশমিক ২২ একর জমির অনুমোদন নিলেও সেখানে জমি কিনেছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৪১ একর। না কিনে অনুমোদন নেওয়া বাকি ৭৫ দশমিক ৫২ একরের সিংহভাগে রয়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, তিনটি মসজিদ ও শতাধিক দোকানপাট। অনুমোদন না নেওয়ায় জমিগুলো নামমাত্র মূল্যে কিনতে স্থানীয় বাসিন্দা ও নিরীহ কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এলাকাবাসী ইস্টউড আবাসন কোম্পানির অনুমোদন ও পরিবেশের ছাড়পত্র বাতিলের আবেদন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। গত ২৩ এপ্রিল এ অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরে শুনানির জন্য উভয়পক্ষকে ডাকা হলেও ইস্টউড আবাসন প্রকল্পের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না।

শুনানিতে এলাকাবাসীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মনির হোসেন মাস্টার নামে এক ব্যক্তি। তিনি কালবেলাকে আবাসন প্রকল্প অনুমোদন নিতে হলে কমপক্ষে ৭০ ভাগ জমি কিনতে হয়; কিন্তু এ আবাসন প্রকল্পটি ৪৫ জমি কিনে ভুয়া দলিল ও কাগজ তৈরি করে পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়। তারা অনুমোদন নিতে ভুয়া দলিল ও ভুয়া নামজারি ব্যবহার করে। ইস্টউড সিটির অনুমোদন বাতিল না করলে আমরা এলাকাবাসী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।

ইস্টউড আবাসন কোম্পানি থেকে প্লট কেনা কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, এখানে প্লট কেনা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। আমরা প্লট কিনেছি একেকজন ৮ থেকে ১০ বছর আগে। এত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রজেক্টের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তারা আমাদের প্লট বুঝিয়ে দিচ্ছে না। অথচ সে সময় নানা রকম চটকদার বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়ে আমাদের কাছে প্লট বিক্রি করেছে।

প্রশাসন যা বলছে: নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আমাকে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল শামীম, পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার তাছবীর হোসেনকে (ভূমি) নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির গঠন করে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কয়েক মাস সময় লাগবে।

ইস্টউড কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ইস্টউড সিটির প্রজেক্ট ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, খাল ভরাটের বিষয়টি মিথ্যা। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি, মানুষের ক্ষতির জন্য নয়। আমরা পানি সরানোর জন্য খাল আরও পরিষ্কার করে দিয়েছি। গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, পানি কী কারণে আটকে গেছে সেটা গ্রামের মানুষ বলতে পারবে। আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা কোনো খাল দখল করিনি, জোর করে কারও জমিও দখল করিনি। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ সব অনুমোদন নিয়ম মেনেই হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রজেক্টের কাজ এখনো চলমান। কাজ শেষ হলে গ্রাহকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে সেটাও দেখা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসএসসির ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন

গাজায় বিস্ফোরণে ইসরায়েলি সেনা নিহত, উত্তেজনা চরমে

প্রথম প্রেম ভুলতে পারেননি আনুশকা

রাবিপ্রবিতে প্রথমবার ছাত্রদলের কমিটি

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় রংপুরের জয়

প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাঁটলেই ৭ পরিবর্তন আসবে আপনার

কক্সবাজারে এসএসসিতে ফেল করায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নদীতে সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর রোমহর্ষক বর্ণনা

যমজ দুই ভাইয়ের আশ্চর্যজনক ফলাফল

ছবিতে প্রথমে কী দেখতে পাচ্ছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনি আসলে কেমন

১০

৮ শিক্ষকের স্কুলে ৯ পরীক্ষার্থী, অথচ সবাই ফেল

১১

চলন্ত বাইক থেকে ফেলা হলো ছাত্রলীগ নেতাকে, এরপর যা ঘটল

১২

ইরান ভ্রমণে না যেতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

১৩

রাজধানীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৫

১৪

ছুটির দিনেও খোলা থাকবে কাস্টম হাউস

১৫

দুপুরের মধ্যে ৪ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৬

মাদক কারবার / মুসলিম একটি দেশে মৃত্যুদণ্ড ২৪৫, যাবজ্জীবন ৯৫৫

১৭

ময়মনসিংহে ১১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

১৮

১১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮২

২০
X