আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জুলাই অভ্যুত্থান

শহীদ আরাফাতের স্বপ্ন ছিল হাফেজ হবে

শহীদ আরাফাতের স্বপ্ন ছিল হাফেজ হবে

গত বছর জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষে তা গড়ায় সরকার পতনের আন্দোলনে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ জুলাই গণঅভ্যুত্থান। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তবে এ বিজয় এসেছে শত শত প্রাণের বিনিময়ে। তাদের একজন শহীদ আরাফাত হুসাইন (১২)।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরে রাজধানীজুড়ে বিজয় মিছিল বের হয়। এ মিছিলে অংশ নেওয়ার আনন্দ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায়নি মাদ্রাসাছাত্র আরাফাত। তাই সেদিন বিকেলে সে অন্য সহপাঠীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। তবে মিছিলটি উত্তরার আজমপুর পূর্ব থানার সামনে যেতেই গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি আরাফাতের পেটের বাঁ-পাশ দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। এর পর থেকে আরাফাতকে নিয়ে শুরু হয় দরিদ্র মা-বাবার যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। সাড়ে চার মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২২ ডিসেম্বর রাতে সে মারা যায়।

উত্তরার জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আরাফাত। শহীদুল ইসলাম ও সালেহা আক্তার দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের পাকুরিয়া এলাকায় ছোট্ট একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন রিকশাচালক শহীদুল। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। ছেলের মৃত্যুর পর দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় কাটছে শহীদ আরাফাতের পিতা শহীদুলের দিন। পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুঃখ-কষ্ট।

শহীদ আরাফাতের বড় ভাই হাসান আলী কালবেলাকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি। তিনি বলেন, আমার ভাই যখন চিকিৎসাধীন তখনো সেভাবে সহযোগিতা আমরা পাইনি। অনেক কষ্ট করে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করছিলাম। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কিছু সহযোগিতা ছাড়া সরকারি কোনো অনুদান আমরা পাইনি। আরাফাতের শোকে আমার বাবাও এক্সিডেন্ট করে বিছানায় শুয়ে আছেন। পরিবারে বর্তমানে একমাত্র উপার্জনকারী আমি। আমিও সেভাবে সাপোর্ট দিতে পারছি না। সব মিলিয়ে অনেক দুঃখ-কষ্টে কাটছে আমাদের জীবন।

শহীদ আরাফাতের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ও আমার পরিবারের—এমনকি শহীদ আরাফাতেরও স্বপ্ন ছিল একজন কোরআনে হাফেজ এবং বড় মাওলানা হওয়ার। আমাকে নিয়েও সে স্বপ্ন ছিল সবার; কিন্তু দরিদ্রতার জন্য সেটি পূরণ হয়নি। আমার ভাইকে নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনার পুলিশ বাহিনী সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। তাকে হারানোর পর আমার বাবা-মা আর ঘুমাতে পারে না। পুরো পরিবার তার শোক সইতে পারছে না। কোনো আনন্দ নেই পরিবারে।

বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে হাসান আলী বলেন, আমার ভাইসহ যারা শহীদ হয়েছিলেন, তারা এখনো বিচার পায়নি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও কষ্টের। আমি নিজেও মামলা করেছি; কিন্তু ভালো কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার এবং জেলে থাকার কথা থাকলেও সেটি হয়নি বরং যারা মামলা করেছে, তারাই সব সময় ভীতির মধ্যে থাকছে। অনেকে ভয়ে বাড়িতেও থাকছে না। এটা আমাদের জন্য চরম হতাশার।

সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ, বিচার পুনর্বাসনের প্রশ্নে সরকারের পদক্ষেপ অপ্রতুল। বিচার না হওয়া পর্যন্ত শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। আর তারা যে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ দেখেছে, সে স্বপ্ন পূরণ না হলে তাদের দেওয়া রক্তের মূল্য থাকবে না। আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করব জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং বৈষম্য, দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ আমরা দেখতে পাব। সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি, সরকার যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্রুততম সময়ে শহীদ এবং আহত পরিবারকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৫

ছুটির দিনেও খোলা থাকবে কাস্টম হাউস

দুপুরের মধ্যে ৪ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

মাদক কারবার / মুসলিম একটি দেশে মৃত্যুদণ্ড ২৪৫, যাবজ্জীবন ৯৫৫

ময়মনসিংহে ১১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

১১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮২

আইনজীবীকে ধর্ষণের অভিযোগে কৃষি কর্মকর্তা কারাগারে

আমিরের নেতৃত্বে চীনের উদ্দেশে জামায়াত প্রতিনিধিদলের ঢাকা ত্যাগ

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫ বছরে সর্বনিম্ন পাসের হার, নেপথ্যে

১০

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১১

বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে জামায়াত আমিরের আহ্বান

১২

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির

১৩

অসুস্থ নারীকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বিআরডিবি কর্মকর্তা

১৪

এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় পিতৃহীন সুরাইয়াকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

১৫

গায়ানায় রাজ সাকিবের, শ্রীলঙ্কায় ভঙ্গুর বাংলাদেশ

১৬

শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি / মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৭

জবির ভূমিদাতা কিশোরীলালের শততম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

১৮

শিক্ষকের ওপর হামলা, জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুলের পদ স্থগিত

১৯

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

২০
X