রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৭ এএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ৪৫ লাখ মানুষের

গণপরিবহন সংকট
ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ৪৫ লাখ মানুষের

এবারের ঈদযাত্রায় ঘরে ফিরবেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪৫ লাখের বেশি যাত্রী সুষ্ঠু গণপরিবহন পাবেন না। গণপরিবহন সংকট ও ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে এসব যাত্রী যানবাহনের ছাদে ও পণ্যবাহী পরিবহনে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। এতে দুর্ঘটনা বেড়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে বাড়ি যান ৩০ লাখের বেশি মানুষ। কিন্তু ঢাকাকেন্দ্রিক গণপরিবহন ব্যবস্থায় দিনে সর্বোচ্চ ২২ লাখ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। এমন বাস্তবতায় পরিবহন সংকট মোকাবিলায় পরিবহন পুল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেনাবাহিনী, ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, দেশের যোগাযোগ বাস্তবতায় ৯০ ভাগ যাত্রী এখন সড়কপথ নির্ভর। বাদবাকি ১০ ভাগ নৌ, রেল ও আকাশপথ ব্যবহার করে। তাই ঈদ ব্যবস্থাপনায় রেলের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সড়কপথে বাড়তি গণপরিবহন জোগানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদীউজ্জামানের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ।

তিনি বলছেন, এবার ঈদ উৎসবের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ যুক্ত হওয়ায় সব ধর্মের মানুষ বাড়ি ফিরবেন। এই হিসাবে ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়তে পারেন ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ। অথচ গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়েনি। উল্টো পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো

কসমেটিকস লাগিয়ে ঈদযাত্রী টানার পরিকল্পনা হচ্ছে। নগরকেন্দ্রিক স্বল্প দূরত্বের চালকরা আন্তঃজেলা রুটে এসব যানবাহন চালাবেন। এতে দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। নৌ-রেল ও বিমানপথে মাত্র ১০ ভাগ মানুষ বাড়ি ফেরেন। সড়কপথের সঙ্গে এই ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে উঠতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।

ঈদে লম্বা ছুটি: সরকারিভাবে ১১ এপ্রিল ঈদ ধরেই সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই তারিখ ধরেই বিক্রি হচ্ছে বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ বিমানের অগ্রিম টিকিট। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে এবার ঈদের ছুটি থাকতে পারে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার আবার পহেলা বৈশাখের ছুটি। এই হিসাবে সরকারি ছুটি পাঁচ দিন নিশ্চিত। এর আগে ৫-৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার। ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। মাঝখানে ৮-৯ এপ্রিল অফিস চালুর কথা থাকলেও অনেকেই এই দুদিন ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নেবেন। সব মিলিয়ে ১০ দিনের ছুটির কবলে পড়ছে দেশ।

সাধারণত ছুটি বেশি হলে মানুষ বাড়িও যান বেশি। তবে ছুটি যতই থাকুক, ঈদের আগের দু-তিন দিন চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে পোশাক কারখানা ছুটির পরই মূল চাপটা পড়ে। এ জন্য ২১ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ঈদ প্রস্তুতি সভায় পোশাক ও শিল্পকারখানায় পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এরই মধ্যে সরকারি আদেশে দুই দিন ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এতে ঘরে ফেরা মানুষ অনেকটাই নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে দাবি করেছে তারা। আগামী ৮-৯ এপ্রিল সরকারিভাবে ছুটি দেওয়ার দাবি জানান নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। তিনি বলেন, এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখ একসঙ্গে হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি হবে। সরকারি আদেশে দুই দিন ছুটি না বাড়ালেও অনেকেই এই সময়টুকু ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।

ঈদে যত মানুষ ঢাকা ছাড়েন: বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামানের গবেষণায় দেখা গেছে, ঈদের আগের কয়েকদিন দিনে গড়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস-মিনিবাসে, ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে এবং সোয়া লাখ মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে বাড়ি যান সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রায় শামিল হন ৪ লাখ মানুষ। আরও ৮ লাখ মানুষ ট্রাক, অটোরিকশাসহ নানা অপ্রচলিত বাহনে ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করেন। এর বাইরে কিছু মানুষ বিমানে যাতায়াত করেন।

বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ: ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে সরকারি পরিবহন পুলে বিপুলসংখ্যক বাস রয়েছে। এসব যানবাহনের চালকদের সবাই দক্ষ। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাসগুলো ঈদের সময় অলস পড়ে থাকে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেনাবাহিনীর বাসগুলো ঈদযাত্রায় কাজে লাগানো যেতে পারে। হাদীউজ্জামান বলেন, এসব বাস কাজে লাগালে অনেক যাত্রী বাড়ি যেতে পারবে। তা ছাড়া ঈদে বিআরটিসির বাস সেবা খুব একটা চোখে পড়ে না। এজন্য রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থার গাড়িগুলো যেসব রুটে যাত্রীর চাপ বেশি সেখানে কাজে লাগানো যেতে পারে।

ঈদযাত্রায় ৯০ ভাগ সড়ক নির্ভরতা কমাতে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালবেলাকে বলেন, আমরা সবাই মিলে নিরাপদ ঈদযাত্রার চেষ্টা করছি। গণপরিবহন সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ঈদ উৎসবে এত মানুষ একসঙ্গে বাড়ি যায়। এই চাপ সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন। এত গণপরিবহন তো আমাদের নেই।

শতাধিক স্পটে ভোগান্তির শঙ্কা: গত ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হয়। ২১ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও অংশীজনের সঙ্গে বিআরটিএ ভবনে ঈদ প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে ঈদে যানজট ও ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হতে পারে, এমন ১৫৫টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। মূলত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এই স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে। এসব স্থানে ভোগান্তি এড়াতে সড়ক ও সেতু মেরামত এবং সেতুর টোল প্লাজা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে করা সমীক্ষায় সারা দেশে ১২২টি স্পটকে ঝুঁকিপূর্ণ ও যানজটপ্রবণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যানজটপ্রবণ যে ১৫৫টি স্থানের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রয়েছে ৪৮টি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথের মহাসড়কে রয়েছে ৫৫টি যানজটের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। এর মধ্যে বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড় অন্যতম। ঢাকা-সিলেট পথে যানজটের ভোগান্তি হতে পারে এমন জায়গা রয়েছে ৪১টি। এই মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চার লেনের কাজ চলছে। ফলে পূর্ণ গতিতে যানবাহন চলতে পারবে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে ঝুঁকির জায়গা ৬টি। ঢাকা-আরিচা সড়কে ৮টি যানজটপ্রবণ জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে থাকা ১১টি সেতু এবং ২টি সড়কে টোল আদায় করা হয়। টোল আদায় কেন্দ্রে যানবাহনের চাপ পড়লে যানজট লেগে যায়। এজন্য বিআরটিএ সভায় অনেকেই ঈদ উপলক্ষে সেতুগুলোতে টোল না নেওয়ার পরামর্শ দেন।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশে ১২২টি যানজটপ্রবণ এলাকার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চারটি অতি যানজটপ্রবণ স্পট হলো আমিন বাজার, সাহেলপুর, নায়ার হাট সেতু ও জাগীর ধলেশ্বরী সেতু। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটপ্রবণ ৩৬টি স্পটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তিনটি স্পটের মধ্যে হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সবচেয়ে নিরাপদ মহাসড়ক ধরা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৩৭টি স্পটের মধ্যে অধিক যানজটপ্রবণ ১৫টি। চন্দ্রা-আশুলিয়া পথ আরেক ভোগান্তির নাম। এ পথে যানজটের ভোগান্তি কমাতে নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নির্মাণকাজের কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়েছে। ফলে উত্তরের ৩০ জেলার মানুষ এ করিডোর ব্যবহারের মুখে ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রলীগ নেতা হত্যা / স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কসহ ৩ নেতাকে বহিষ্কার

গোল্ডেন বাটন পেল কালবেলা

টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা / ১৮ মাস পর আবার জাতীয় দলে সাইফউদ্দিন

দেশের দুই জেলায় ভূমিকম্প

রমজান বাহিনীর হাতে জিম্মি তিস্তা চরের মানুষ

ছবি এডিট করে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করত তারা

একীভূত হতে এবার আপত্তি ন্যাশনাল ব্যাংকের

হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা

তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ল ১৮ শিক্ষার্থী

১০

মোস্তাফিজকে একাদশে নিয়েই ব্যাটিংয়ে চেন্নাই

১১

গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংসের জন্য সরকার দায়ী : এবি পার্টি

১২

নিয়োগ দিচ্ছে র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

১৩

সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা মামলা থেকে সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যানের অব্যাহতি

১৪

ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক

১৫

ইসরায়েল-পাকিস্তান সম্পর্কের আশা যেভাবে নষ্ট হলো

১৬

নর্দান ইউনিভার্সিটিতে সপ্তাহব্যাপী ‘বিজনেজ ফেস্টিভাল’-এর উদ্বোধন

১৭

টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতালের রড বিক্রি করলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

১৮

তামিমের দলে ফেরা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি

১৯

বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনি ব্যবস্থা নিন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২০
*/ ?>
X