অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। এর ফলে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের এডিপি বাস্তবায়ন আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ কমেছে। বিদায়ী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শুধু ২০২১-২২ নয়, করোনার দুই বছর পর গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি বলছে, সর্বশেষ অর্থবছরে সরকারের এডিপি বাজেট ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১ হাজার ৪৫৯ প্রকল্পের অধীনে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল। সে অর্থবছরে করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প থমকে ছিল, যে কারণে এডিপি বাস্তবায়ন কম ছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ সালে কোনো মহামারি না থাকলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এডিপি বাস্তবায়ন
কম হয়েছে। আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এডিপির মোট খরচের মধ্যে বিদেশি ঋণের খরচ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ বা প্রকল্প সাহায্য থেকে খরচ হয়েছে মোট বাজেটের ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সরকারি অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে মোট বাজেটের ৮১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ৭৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কৃচ্ছ্রসাধন এবং এডিপি আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ এবং গাড়ি কেনা বাদ ছিল। ফলে বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সর্বশেষ জুন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর আগের বছরের জুনে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বাজেট যা ছিল তার চেয়েও বেশি খরচ করেছে এ বিভাগ। বিভাগটির এডিপি বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা; কিন্তু তারা খরচ করেছে ৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ১০৩ শতাংশ খরচ করেছে তারা। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ প্রকল্প দেশের বাইরে দূতাবাস নির্মাণের। কম বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৩৯ শতাংশের কিছু বেশি। চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অগ্রাধিকার অনুসারে বিভিন্ন প্রকল্পকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে সরকার। সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোকে রাখা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর জন্য ৭৫ শতাংশ অর্থ ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। আর ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর জন্য নির্ধারিত তহবিলের ১০০ শতাংশই ছাড় করা যাবে।
মন্তব্য করুন