ইমরান খান, ধামরাই (ঢাকা)
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা

ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা

৪০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ধামরাইয়ের যশোমাধব মন্দির কালের ধারায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। ৩৫৪ বছর ধরে এ মন্দিরকে ঘিরেই চলছে দেশের সুবিখ্যাত রথযাত্রা উৎসব ও মেলা।

জানা যায়, রাজা যশোপাল এক দিন হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতে যান ধামরাই এলাকার পাশের গ্রামে। রাস্তায় চলতে চলতে একটি মাটির ঢিবির সামনে গেলে হাতিটি থেমে যায়, আর চলতে চায় না। রাজা শত চেষ্টা করেও হাতিটিকে সামনে নিতে পারেন না। এ ঘটনায় অবাক হলেন তিনি। তখন তিনি হাতি থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনকে ওই মাটির ঢিবি খনন করার জন্য নির্দেশ দেন। সেখানে একটি মন্দির পাওয়া যায়। মন্দিরে কতগুলো মূর্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর মূর্তির মতো শ্রীমাধব মূর্তিও ছিল। রাজা ভক্তি করে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে ধামরাই সদরে ঠাকুরবাড়ি পঞ্চাশ গ্রামের বিশিষ্ট পণ্ডিত শ্রীরামজীবন রায়কে তিনি ওই মাধব মূর্তি নির্মাণের দায়িত্ব দেন।

তখন থেকে শ্রীমাধবের নামের সঙ্গে রাজা যশোপালের নামটি যুক্ত করায় বিগ্রহের নতুন নাম হয় শ্রীশ্রী যশোমাধব। সেদিন থেকে সেবা পূজার বন্দোবস্ত হয়। আজও ধামরাইয়ে শ্রীমাধব-অঙ্গনে পূজা-অর্চনা চলে আসছে। পরবর্তী সময়ে শ্রীমাধবকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ধামরাইয়ের শ্রীশ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ও মেলা। তবে, কবে কীভাবে এ বাঁশের রথটি কাঠের রথে পরিণত হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলা ১২০৪ থেকে ১৩৪৪ সন পর্যন্ত ঢাকা জেলার সাটুরিয়া থানার বালিয়াটির জমিদাররা বংশানুক্রমে এখানে চারটি রথ তৈরি করেন। ১৩৪৪ সালে রথের ঠিকাদার ছিলেন নারায়ণগঞ্জের স্বর্গীয় সূর্যনারায়ণ সাহা। এ রথ তৈরি করতে সময় লাগে এক বছর।

ধামরাই, কালিয়াকৈর, সাটুরিয়া, সিঙ্গাইর থানার বিভিন্ন কাঠশিল্পী যৌথভাবে নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করে ৬০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন রথটি তৈরি করেন। এ রথটি ত্রিতলবিশিষ্ট ছিল, যার প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় চার কোণে চারটি প্রকোষ্ঠ ও তৃতীয় তলায় একটি প্রকোষ্ঠ ছিল। বালিয়াটির জমিদাররা চলে যাওয়ার পর রথের দেখভালের দায়িত্ব পালন করত টাঙ্গাইলের রণদাপ্রসাদ সাহার পরিবার।

২০১০ সালে ধামরাইয়ে পুরোনো রথটির আদলে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রথ বানিয়ে দেওয়া হয়। ৪০ জন শিল্পী ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে ৩৭ ফুট উচ্চতা ও ২০ ফুট প্রস্থের কারুকার্যখচিত নতুন রথটি নির্মাণ করেন। লোহার খাঁচার ওপর সেগুন ও চাম্বল কাঠ বসিয়ে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় সব শৈল্পিক নিদর্শন। এতে রয়েছে, লোহার তৈরি ১৫টি চাকা। রথের সামনে রয়েছে কাঠের তৈরি দুটি ঘোড়া ও সারথি।

এ ছাড়া রথের বিভিন্ন ধাপে প্রকোষ্ঠের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে, কাঠের তৈরি দেব-দেবীর মূর্তি। প্রতি বছর রথযাত্রার আগে রং চড়ানো ও সাজসজ্জার কাজ করে এটিতেই অনুষ্ঠিত হয় রথ উৎসব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবারও মার্কিন সেনাদের ওপর ড্রোন হামলা

কিয়েভে ড্রোন হামলার রেকর্ড রাশিয়ার

জামায়াতে যোগ দিলেন জাপা নেতা

শুটিং সেটে হঠাৎ অসুস্থ স্বস্তিকা, কী হয়েছিল? 

অভিনেতা মাইকেল ম্যাডসেন আর নেই 

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করব : নাহিদ

স্নাতকোত্তরে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় পেলেন ২৫০

নুর-রাশেদসহ গণঅধিকারে ২৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ

নতুন ফিচার নিয়ে এলো হোয়াটসঅ্যাপ

‘রাজনীতি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল’

১০

ছুটির দিনে খেলতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

১১

ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের গোপন বৈঠক

১২

বিদেশি অস্ত্রসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

১৩

ইসরায়েলি হামলায় মারা গেলেন আরও এক ফিলিস্তিনি ফুটবলার

১৪

আবারও জয়ার সিনেমার ট্রেলার শেয়ার করলেন অমিতাভ বচ্চন

১৫

সৌরজগতে শনাক্ত হলো রহস্যময় ধূমকেতু

১৬

উড়াল থেমেছিল চিকিৎসায়, জীবন থামল সড়কে

১৭

চতুর্থ বিয়ের জন্য তৃতীয় স্ত্রীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভুয়া সনদ, অতঃপর...

১৮

এবার চাঁদাবাজির অভিযোগে জনতার হাতে আটক পুলিশ সদস্য

১৯

এবার শেফালীকে নিয়ে মুখ খুললেন স্বামী পরাগ

২০
X