কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রেমিট্যান্সে পতন হলেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা

দেশে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
দেশে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

নানা ধরনের সংকট এবং চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নয় মাসে দেশের রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সেইসঙ্গে একক মাস হিসেবে মার্চেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই অবস্থান থেকেই পিছিয়ে রয়েছে দেশের রপ্তানি খাত। রপ্তানি আয়ের প্রাণভোমরা তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, গত সোমবার প্রকাশিত রেমিট্যান্সের তথ্যে দেখা গেছে, হুন্ডির চেয়ে ব্যাংকে ডলারের দর কমে যাওয়ায় ঈদের আগেও কমে গেছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মার্চ মাসে আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য এবং বাইসাইকেলসহ সকল খাত মিলে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রপ্তানি আয় এসেছে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে নয় মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে মার্চে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫১০ কোটি ডলার। যা গত বছরের মার্চে ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে মার্চ মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দুদিক থেকেই রপ্তানি আয় কমেছে। অর্থবছরের নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম এসেছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৬২৬ কোটি ডলার। এ সময় রপ্তানি আয় এসেছে ৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। আর মার্চ মাসের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫১৪ কোটি ডলার। যদিও এ সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে ৫১০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম এসেছে শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া এবং বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার আশংকাসহ বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যেও রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। নানা কারণে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে সম্প্রতি রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর যে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৈরি পোশাকসহ পুরো রপ্তানি খাত। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আগামী দিনে রপ্তানি আয় আরও কমবে। আগামী জুন পর্যন্ত সরকার সময় দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটিডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বলেন, সাত মাসে তৈরি পোশাক খাতে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। গড়ে মাত্র সাড়ে তিন শতাংশের মতো হয়েছে। নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও ওভেনে এখনো সংকট রয়েছে। তবে ভালো দিক হচ্ছে, প্রথমবারের মতো ৫ বিলিয়নের বেশি রপ্তানি আয় এসেছে। যা এর আগে কখনো হয়নি। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো যে সংকট আছে, তাতে পুরো অর্থবছর শেষে খুব ভালো কিছু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে কৌশলগুলো নিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই চলতি মাসে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পাশাপাশি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজার খোঁজার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক কাজ করেছি বলেই আমাদের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিভিন্ন খাতে রপ্তানি আয়ের উত্থান-পতন

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় এসেছে ৩ হাজার ৭২০ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যদিও এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কম হয়েছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় ৮৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে এই খাতটিতে। আলোচ্য সময়ে ৭১ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

এদিকে, আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ সময়ে এই খাতের রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৭৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। যা ২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, এ সময় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬৫ কোটি ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ৬৯ দশমিক কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ

দেশে চলমান শৈত্যপ্রবাহ কতদিন থাকবে জানালেন আবহাওয়া গবেষক 

ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে : হামিম 

ঢাকা-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রবিন

এনসিপি নেত্রী নাবিলাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা

তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুবসমাজকে একজোট হওয়ার আহ্বান হাবিবের

উদার রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারেক রহমান : ডা. তৌহিদুর

ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র জমা

জার্নালিজম ভর্তিচ্ছুদের জন্য এসইউবির ‘মিডিয়া ট্যালেন্ট হান্ট ২০২৬’

ফেনীতে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা

১০

নির্বাচনে অংশ নেবেন না আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

১১

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন গণঅধিকারের আবু হানিফ

১২

জকসু নির্বাচন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রুট প্ল্যান ঘোষণা

১৩

প্রকাশ্যে কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩

১৪

শুরু হলো জাতীয় কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্ব

১৫

ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের মনোনয়নপত্র দাখিল

১৬

ইন্দোনেশিয়া  / বৃদ্ধাশ্রমে আগুন লেগে ১৬ জনের মৃত্যু

১৭

মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আমান

১৮

হলিউডে এ বছরের আলোচিত ডিভোর্স 

১৯

ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াত জোটের প্রার্থী হচ্ছেন যিনি

২০
X