মুঠোফোনের স্ক্রিনে ভাসছে দুটো বাচ্চার যৌথ ছবি। সেই ছবি মুখের সামনে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন আর আহাজারি করছেন এক বৃদ্ধ৷ কান্নাভেজা কণ্ঠে এই বৃদ্ধ বলছেন, ‘ও.. আল্লাহ, এই কবুতরের জোড়া তুমি কেমনে ভাঙলা? তোমার কী একটুও দয়া-মায়া হইলো নারে আল্লাহ? এই কবুতরের জোড়া তুমি কেমনে ভাঙলা?’
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটের ইমার্জেন্সি ড্রেসিংরুমের সামনে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত জুনায়েদ হাসানের নানা মোসলেম উদ্দীন মোল্লা।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জুনায়েদ যেন ছিল পুরো পরিবারের আলো। জুনায়েদের বড় ভাইসহ এ ছবিটি তুলেছিলেন তার নানা। এখন দুই ভাইয়ের সে ছবি হাতে নিয়েই করছেন শোক। জুনায়াদের মৃত্যুতে পরিবারের সবার মনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আহাজারি করতে করতে জুনায়েদের নানা বলছিলেন তার সঙ্গে নাতির খুনসুটিপূর্ণ সময়গুলো৷ জুনায়েদ তার সাইকেলে করে নানাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সেই স্মৃতি যেন নাতি মারা যাওয়ার পর বারবার কড়া নাড়ছে তার মনে। সেসব রোমন্থন করতে করতে তিনি বলেন, ও নানা, তুমি আমারে বলছিলা, আমি সাইকেলডা লইয়া আহি আপনে খাড়ান। আর কহন সাইকেল লইয়া আইবা? আল্লাহ- এই দুঃখ আমি কারে কমুরে নানা?'
বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় এখানে মোট চারজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে জুনায়েদ মারা গেছে৷ বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আশঙ্কাজনকদের একজন জারিফ ফারহান। মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার জন্য রক্তের দরকার। পরিবারের স্বজনরা রক্ত জোগাড় করতে গেছেন। আর বার্ন ইউনিটে আছেন ফারহানের ভাইয়ের বন্ধু মো. আশিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ফারহানের অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল৷ ডাক্তাররা ব্লাড ম্যানেজ করতে বলছে। ওর মুখ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ উরু পুড়ে গেছে। দেখার মতো অবস্থা নেই।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের ইমার্জেন্সিতে দগ্ধ ও আহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে। ড্রেসিংরুমে দগ্ধদের কাতরাতে দেখা গেছে।
মন্তব্য করুন