রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার ব্যস্ত সড়কে ভয়াবহ কায়দায় ছিনতাই—চলন্ত গাড়ি থেকে নারীর ব্যাগ ছোঁ মেরে টেনে নেওয়ার আলোচিত ঘটনায় অবশেষে চক্রের একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম রবিউল (৩৩)। তার কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত সাদা রঙের প্রাইভেট কার ও ভুক্তভোগী নারীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে এই পিবিআই।
পিবিআই জানায়, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ছিনতাইয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সেটি বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং পুরোনো ছিনতাই কৌশলের মিল খুঁজে রবিউলকে শনাক্ত করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার (০২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বনশ্রীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অর্গানাইজড ক্রাইম দক্ষিণ (এসআইএন্ডও-দক্ষিণ) ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবদুর রহমান জানান, গত ২৬ এপ্রিল ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর গ্রিনল্যান্ড টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারহানা আক্তার জাহান। হঠাৎ একটি সাদা প্রাইভেট কার এসে থামে। জানালা দিয়ে এক ছিনতাইকারী তার হাতের ব্যাগটি ছোঁ মেরে টান দেয়। ব্যাগটি হাতে বাঁধা থাকায় ফারহানা গাড়ির সঙ্গে ছিটকে পড়ে এবং বেশ কিছুক্ষণ গড়িয়ে যান। ব্যাগটি খুলে পড়লে ছিনতাইকারীরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, রবিউল আদালতে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে রবিউল আদালতকে জানিয়েছে, সে ও তার দুই সহযোগী প্রায় প্রতিদিনই ভোরে ঢাকায় প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাই করতে বের হয়। তাদের টার্গেট হতো শহরে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ভোরে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। ঘটনার দিনও তারা এ ধরনের আরও চারটি ছিনতাই চালিয়েছে।রবিউলের ভাষ্যমতে, তারা তিনজন মিলে ২৫ থেকে ৩০টির বেশি ছিনতাই করেছে। প্রতিবার ছিনতাই শেষে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ভাগ করে নেয় এবং ব্যাগে থাকা বাকি জিনিসপত্র ফেলে দেয়।
গত ২৬ এপ্রিলে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর গ্রিনল্যান্ড টাওয়ারের সামনে গাজীপুরের চন্দ্রার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারহানা আক্তার জাহান ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিনি বাসের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার এসে তার সামনে দাড়ায়। গাড়ির সামনের অংশের বাম পাশের জানালা দিয়ে একজন ছিনতাইকারী ঝুঁকে তার ভ্যানিটি ব্যাগটি ছোঁ মেরে টান দেয়। ব্যাগটি হাতে বাঁধা থাকায় ওই নারী ছিটকে পড়ে যান এবং গাড়ির সঙ্গে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরে ব্যাগটি খুলে পড়লে ছিনতাইকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী নারী প্রাণে বাঁচলেও তার শরীরে বিশেষ করে হাত, হাঁটু ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত পান। এই ঘটনায় আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশকে রমনা থানায় মামলা নিতে বলেন। পুলিশ মামলা করে। তদন্ত শুরু করে পিবিআইসহ অন্যান্য সংস্থা।
পিবিআইর এসআইএন্ডও দক্ষিণ শাখা জানিয়েছে, এই চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ চলছে। তদন্ত শেষ করে দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন