বাল্যবিবাহের কারণে দেশে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বা যুব উন্নয়ন সম্ভাবনার এক-তৃতীয়াংশ হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া থেকে যারা বঞ্চিত তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
সোমবার (১৯ জুন) কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলোর (সিবিও) সহযোগিতায় কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘পরিবর্তনের ধারা শুরু কিশোরীদের থেকে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান বক্তারা এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) অর্থায়নে পরিচালিত কেয়ার বাংলাদেশের ‘অ্যাক্সিলারেটিং অ্যাকশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ (এএইসিএম)’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষক, ঊর্ধ্বতন সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং সিবিও-এর ১২০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনা পরিচালক এম এ আখের বলেন, ‘বাল্যবিবাহের ফলে কিশোরীদের অংশ না নেওয়ায় যুব উন্নয়নের এক-তৃতীয়াংশ আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমাদের জনসংখ্যার যেসব মানুষ শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতে হবে।’
কেয়ার বাংলাদেশ-এর টিপিং পয়েন্ট ইনিশিয়েটিভের টিম লিড সাকিনা সুলতানা কিশোরী নেতৃত্বে এলসিওএম মডেলটি বাস্তবায়নে অংশগ্রহণমূলক এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ-এর লিঙ্গ, কিশোর ও যুব প্রোগ্রাম বিশ্লেষক হুমায়রা ফারহানাজ বলেন, ‘কমিউনিটি পর্যায়ে নারী ও কিশোরীরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হয় তা মোকাবিলায় সিবিও-এর সঙ্গে কার্যকরী অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কামরুন নাহার বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী যদি ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে স্থানীয় কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং স্কুলে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
এএইসিএম-এর (দ্বিতীয় পর্যায়) নারীবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
নারীবিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সালেহা বিনতে সিরাজ বলেন, শুধু কিশোরী নয়, পরিবর্তনের এই ধারায় কিশোরদেরও যুক্ত করতে হবে।’
কেয়ার বাংলাদেশ-এর উইমেন অ্যান্ড গার্লস এম্পাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) রওনক জাহান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘৬ জেলার ১৫০ জন কিশোরী এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত এবং তাদের প্রত্যেকেই হবে বাংলাদেশের মালালা।’ অনুষ্ঠানে কিশোরীদের অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে সিবিও-এর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কেয়ার বাংলাদেশ-এর ‘লার্নিং কমিউনিটি অন দ্য মুভ’ (এলসিওএম) মডেলটি বাস্তবায়নে দেশের ৬টি জেলায় (বাগেরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধা, জামালপুর, পটুয়াখালী এবং সিরাজগঞ্জ) ৩০টি সিবিও কাজ করবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরীদের স্বাবলম্বী হতে, মতামত পোষণে এবং অধিকার আদায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে।
কেয়ার এবং সিবিও-এর এই অংশীদারিত্ব বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি। এর লক্ষ্য হলো কিশোরীরা যেন তাদের শৈশব উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও সুষ্ঠু জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া এএইসিএম-এর লক্ষ্য হলো স্থানীয় কমিউনিটি ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইতিবাচক পরিবর্তন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের কিশোরীদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
মন্তব্য করুন