মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ প্রাথমিক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশাবিষয়ক এক লাখ সচেতনতামূলক বই বিতরণ করবে উত্তর সিটি করপোরেশন।
সোমবার (২৪ জুলাই) ডিএনসিসির নগর ভবনের কনফারেন্স কক্ষে ‘মশার কামড় ক্ষতিকর’ শীর্ষক একটি কার্টুন ছবি সমৃদ্ধ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এই বইটি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি ডেড কাউন্টিতে শিশুদের মাঝে বিলি করা একটি বইয়ের বঙ্গানুবাদ। ১২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে বিভিন্ন কার্টুনসহ সচেতনতামূলক বাক্য দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে বইটির এক লাখ কপি ছাপানো হয়েছে। দ্রুত এ বইগুলো আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে বইটির আরও এক লাখ কপি ছাপাবে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ডেড কান্ট্রিতে যায়। সেখানে মশার কামড় নিয়ে স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের একটি বই পড়ানো হয়। এতে তারা মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে। ডিএনসিসি বইটি সংগ্রহ করে এটি বাংলায় অনুবাদ করার উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, বইগুলো স্কুলে বিতরণ করা হবে। আমাদের ছোট বাচ্চারা যাতে মশার কামড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং নিজেরা সচেতন হয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। মশার বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করতে চাই।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের ছোটমনিদের জানাতে চাই যে, মশার কামড় ক্ষতিকর। তাদের জানাতে পারলে আমরা মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারব। আমরা আমাদের শিশুদের সুপার হিরো বানাতে চাই, মশার বিরুদ্ধে। বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠায় থাকা ছবিগুলোয় রঙ করে শিক্ষার্থীরা মশার কামড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিখবে। যেমন এতে বলা আছে, কিছু মশা কামড়ালে চুলকানি হয়, কোনো কোনো মশার কামড়ে আবার অসুস্থ হয়। শিশুরা যদি মশার বিষয়ে জানতে পারে এবং কামড় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে, তবে অনেকাংশেই আমরা মশাবাহিত রোগ রুখতে পারব। শিশুরা মশার প্রজননস্থল, ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানলে পরিবারে এর প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বই উত্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হবে। এই বই বিতরণ শেষ হলে আমরা আরও বই ছাপিয়ে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। বইটি পড়ে শেষ করলে ‘সাব্বাস’ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
এদিকে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তার উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুর রহমান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সমঝোতা স্মারকটি হস্তান্তর করা হয়।
২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদি এ সমঝোতার আওতায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কীটনাশকের কার্যকারিতা ও মশার ঘনত্ব, মশার প্রজাতি এই ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। আর পরীক্ষার মাধ্যমেই মশা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ ও যে কোনো ডিভাইসের ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ব্যবহার করবে ডিএনসিসি। ডিএনসিসি থেকে তিনজন কর্মচারী এ কাজে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ গবেষণার কাজে মূল দায়িত্ব পালন করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার ও তার টিম।
মন্তব্য করুন