বৃষ্টি থামতেই বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ। চলতি বছর চট্টগ্রামে ৭৬৪ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, যেখানে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১২ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৬৬ জন। তাছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন, যেখানে পাঁচজনই মারা গেছেন চলতি সেপ্টেম্বরে। এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড চালুর নির্দেশ দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু এ বছরই নয়। ২০২৩ সালেও সেপ্টেম্বর ঢুকতেই ডেঙ্গু প্রকোপ ভয়াবহ বিস্তার লাভ করে। ওই বছর চট্টগ্রামে সেপ্টেম্বরে সবোর্চ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৮৯২ জন, প্রাণ হারান ২১ জন। এই মৃত্যুর হার ২০২৩ সালের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ। একই ভাবে ২০২২ সালেও সেপ্টেম্বর থেকেই ভয়ংকর ডেঙ্গু প্রকোপ শুরু হয়। ২০২২ সালের আগস্টে যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৪ জন, সেখানে সেপ্টেম্বরে ৬০১, অক্টোবরে ১ হাজার ৮৬১ এবং নভেম্বরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের দিকে শেষ হয় বর্ষা মৌসুম। এ সময় অনেকটা থেমে থেমে বৃষ্টি থাকে। এ পরিস্থিতিতে এডিস মশা লার্ভা ছড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগস্টের শেষ দিকে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করে এডিস মশার বিস্তার। এ কারণেই সেপ্টেম্বর থেকেই বাড়তে শুরু করে ডেঙ্গু জ¦রের প্রকোপ। যা নভেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে। এসময় বাড়ির আঙিনা, বাগান, ছাদ এবং পরিত্যক্ত টব ও অন্যান্য সামগ্রীতে যাতে পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সচেতন হতে বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওয়াহিদুর রহমান (১৬) এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বান্দরবানের বাসিন্দা। গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন, সেদিনই চিকিৎধীন অবস্থায় মারা যান এ কিশোর। এর আগে সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলা আকতার ও শান্তা সরদার নামের দুজন নারী মারা গেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের প্রাণ গেছে, যেখানে ছয়জনই নারী।
এই তিনজনসহ চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে পাঁচজন মারা গেল, চলতি বছর কোনো এক মাসে যা সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। সেপ্টেম্বর ঢুকতেই এমন মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, মৃত্যুর বিষয়টি অ্যালার্মিং। পুরো স্বাস্থ্য বিভাগে ডেঙ্গু নিয়ে অ্যালার্ট করেছি। প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্ণার খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অলরেডি খোলা হয়েছে। আমি নিজে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভিজিট করেছি। সেখানেও ৬ বেডের একটি কর্নার খোলা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এস এম জাহেদ কালবেলাকে বলেন, কর্নার হলে আমাদের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হয়। চমেকে কর্নার করার প্রস্তুতি রয়েছে। যদি আমরা দেখি রোগী ভর্তি বেড়েছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই কর্নার খোলা হবে।
মন্তব্য করুন