বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বরিশাল বিভাগজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক, বরগুনার ঘরে ঘরে এডিসের লার্ভা

ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বরিশাল বিভাগ। দেশে দৈনিক আক্রান্তের অর্ধেকটাই এই বিভাগের। মূলত বিভাগের মধ্যে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হিসেবে শীর্ষে আছে বরগুনা জেলা। বাকি পাঁচটি জেলায় মোট আক্রান্তের দুই-তৃতীয়ংশই এই একটি জেলার।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলার প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন মিলছে এডিসের লার্ভা। এ কারণে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেশি বরগুনা জেলায়।

মূলত বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মানুষের অসচেতনতার কারণেই ডেঙ্গুর হাটস্পট হয়ে উঠেছে গোটা বরগুনা জেলা। আর এ জেলার কারণে ডেঙ্গু আতঙ্ক গোটা বরিশাল বিভাগজুড়েই।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৮৩৭ জন রোগী। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৩৯৮ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ও তার আগের দিন সোমবার ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এক তরুণীসহ দুজন। তারা হলেন—বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে সনিয়া আক্তার (১৮) এবং অন্যজন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বড়ই বড়ইতলা গ্রামের ইউনুস মোল্লার ছেলে সাইফুল মোল্লা (৩৫)।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের মধ্যে ৩ হাজার ৫২৭ জনই বরগুনা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ৮২৫ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগীর বাড়িই বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। তা ছাড়া এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ১৫ জনের মধ্যে ১০ জনই বরগুনার বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ আসমা আক্তার জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের শীর্ষে ছিল পিরোজপুর জেলা। তবে এবার শীর্ষস্থানে চলে এসেছে বরগুনা জেলা। আর পিরোজপুরে গত ৬ মাস ৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৭ জন।

আসমা আক্তার জানিয়েছেন, গত ১৭ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত তিন দিন বরগুনা পৌরসভা এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর ওপরে সার্ভে করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। তারা প্রায় প্রতিটি ঘরেই দুই ধরনের মশার উপস্থিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি ইজিপ্টটা এবং অন্যটি অ্যালবোপিকটা। এর মধ্যে ইজিপ্টটা মশা ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তবে অ্যালবোপিকটা ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য দুই ধরনের মশার মধ্যে অ্যালবোপিকটার উপস্থিতিই বেশি।

সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায়, বরগুনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নির্মাণাধীন এবং গ্রামীণ উন্মুক্ত বসতঘর এবং বহুতল ভবনসহ ১৩৮টি বাড়িতে সার্ভে করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল। এর মধ্যে ৪৩টি বাড়িতেই এডিস মশা এবং লার্ভার অস্তিত্ব পেয়েছেন তারা। বাড়িগুলোয় ১৯৪টি পানির কনটেইনারের ৬৫টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। একইভাবে বরগুনা সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর ৪৬টি ঘরের ৩৫টিতেই পাওয়া গেছে এডিস মশার অস্তিত্ব। তা ছাড়া ১৩১টি পানির কনটেইনারের ৭৫টিতেই মশার লার্ভা পেয়েছে সার্ভে টিম। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী বরগুনা পৌর সভার থেকে সদর উপজেলায় এডিস মশার উপদ্রব এবং আক্রান্তের হার বেশি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ কালবেলাকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্ভে প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে বরগুনার ঘরে ঘরে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন।

সার্ভে রিপোর্টের বরাতে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে পৌর শহর এবং উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিন জমে থাকা এসব পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে। তার ওপর ময়লা-আবর্জনাও এর অন্যতম কারণ। তা ছাড়া এ জেলার মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচুর ঘাটতি আছে। তারা ঘরের মধ্যেই কনটেইনারসহ বিভিন্ন স্থানে পানি দিনের পর দিন জমিয়ে রাখছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, পরিবারের একজন সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি মশারি না টাঙিয়ে ঘুমান। যে কারণে তাকে যে মশায় কামড়ায় সেটি গিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের কামড়ায়, যার ফলে শরীরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্ভে করতে গিয়ে এ বিষয়টিরও পর্যাপ্ত প্রমাণ পেয়েছেন। তারা দেখেছেন, একজন আক্রান্ত হওয়ার পর একই পরিবারের বাকি ৪-৫ সদস্যও একে একে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, আমরা গত ছয় মাস ধরেই পুরো জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং পৌর প্রশাসন যৌথভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্ক করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা ধ্বংস করতে ওষুধ ছেটানোর কার্যক্রম নিয়েছে। তার পরও মানুষের সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েই চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল কালবেলাকে বলেছেন, শুধু বরগুনায় এডিস মশার ওপরে সার্ভে হলেও গোটা বিভাগেই এডিস মশা রয়েছে। তবে অন্য জেলাগুলোয় পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বরগুনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেশি বিধায় গোটা বিভাগেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শুধু চিকিৎসা দিয়েই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আর এটা শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভবও নয়। এডিস মশার বিরুদ্ধে সামাজিক এবং পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। না হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির

অসুস্থ নারীকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বিআরডিবি কর্মকর্তা

এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় পিতৃহীন সুরাইয়াকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

গায়ানায় রাজ সাকিবের, শ্রীলঙ্কায় ভঙ্গুর বাংলাদেশ

শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি / মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

জবির ভূমিদাতা কিশোরী লালের শততম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শিক্ষকের ওপর হামলা, জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুলের পদ স্থগিত

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোবাইলে সারচার্জ বন্ধে হাইকোর্টে রিট

মাংসপেশিতে চোট জাকেরের

১০

জবিতে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ৩ দাবিতে বিক্ষোভ

১১

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ / দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

১২

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার কারাদণ্ড

১৩

ফিরেই ঝলক, সাকিবের ব্যাটে দুর্দান্ত ফিফটি

১৪

রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

১৫

গায়েবি মামলার আতঙ্কে ২০ গ্রামের মানুষ

১৬

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগজনক : মামুনুল হক

১৭

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল ফায়ার সার্ভিসের গাভি

১৮

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আ স ম রব

১৯

মহড়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় পুলিশের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

২০
X