পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক জশনে জুলুস। আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করা হচ্ছে এ মহাসমাবেশ। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ জুলুসকে ঘিরে নগরজুড়ে এখন সাজসাজ রব, চলছে আলোকসজ্জা আর উৎসবের আমেজ।
এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার মাঠে লাখো মুসল্লির ঢল নামে। সকাল থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুসল্লিরা জামিয়ার দিকে ছুটে আসতে থাকেন। কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায়, কেউবা বাস ও ট্রাকে চড়ে নামাজের মাঠে উপস্থিত হন।
ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী, পটিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ভক্ত-আশেকানরা এসে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরাদপুরের আশপাশের রাস্তাঘাটে মুসল্লিদের স্রোত জমে ওঠে। পুরো এলাকা পরিণত হয় এক মহামিলনমেলায়।
ঐতিহাসিক এ জুমার নামাজে ইমামতি করেন জশনে জুলুসের নেতৃত্বদানকারী আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)। নামাজ শেষে লাখো মুসল্লি একসাথে হাত তুলে দোয়া করেন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি, ভ্রাতৃত্ব ও দেশের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য।
জামিয়ার মাঠে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা জানান, এ আয়োজন তাদের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও মজবুত করে। পটিয়া থেকে আসা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। লাখো মুসল্লির মাঝে দাঁড়িয়ে মনে হয় আমরা যেন সমুদ্রের এক ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে গেছি। রাসুল (সা.)-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রকাশ এই আয়োজন।’
ফটিকছড়ি থেকে আসা মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, জুলুস কেবল একটি শোভাযাত্রা নয়, এটি আমাদের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। চট্টগ্রামবাসী হিসেবে আমরা গর্ব করি, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জুলুস আমাদের শহরে অনুষ্ঠিত হয়।
জামিয়ার এক ছাত্র জানান, আমাদের কাছে এই ঈদ সব থেকে আনন্দের হয়। অন্য দুই ঈদে সবাই নিজ নিজ মতো থাকে, কিন্তু এ ঈদে ৭০-৮০ লাখ মানুষ একত্র হয়। এই মিলনমেলাই সবচেয়ে সুন্দর।
জুলুস মিডিয়া কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু তালেব বেলাল জানান, মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন এবং আগামীকালের জুলুসে অংশ নিতে পারেন সে জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছেন। নগরের প্রতিটি সড়কে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারের জুলুসে কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এই আয়োজন ইসলামী ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত।
আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে মুরাদপুরের খানকা শরিফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে জুলুস। এরপর মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে এটি শেষ হবে জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা মাঠে। সেখানে দেশখ্যাত আলেম-ওলামারা বক্তব্য রাখবেন এবং শেষে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত হবে। জুলুসের নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)। বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মা.জি.আ)।
প্রায় একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই জুলুস। আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে শুরু হয়েছিল এ আয়োজন। ধীরে ধীরে এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর এ আয়োজনে অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশে পরিণত হয়েছে।
এদিকে জুলুসকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীর মোড়ে মোড়ে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, পতাকা, আলোকসজ্জা ও ব্যানারের বাহার চোখে পড়ছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চলছে মিলাদ মাহফিল ও ফাতেহার আয়োজন। ফলে পুরো নগরী এখন উৎসবের আবহে মুখরিত।
মন্তব্য করুন