সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তারই অংশ হিসেবে সিলেটে রোববার (০৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনের অংশ নিতে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থী ও জনতা। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন পয়েন্টে আগুন লাগিয়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় সিলেটে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রজনতার সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়।
নগরীর বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, তালতলা, জিন্দাবাজার, মহাজনপট্টি, নয়াসড়ক, বারুতখানা, ওসমানী শিশু পার্কের সামনে বিচ্ছিন্নভাবে জড়ো হয়ে মিছিল স্লোগান চলছিল।
এদিকে দুপুর ১২টায় সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বন্দর কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হতে শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় তাদের সঙ্গে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং ছাত্রদল যোগ দেয়।
তারা ভুয়া ভুয়া স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ইটপাটকেল এবং পুলিশ তাদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এখন পর্যন্ত বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট পুলিশের দখলে। তবে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে কিছুক্ষণ পরপর ঢিল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এ সময় একজন শিশুসহ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন পয়েন্টের, গলির মোড়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছিলাম। আমরা সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অবস্থান করি। এ সময় পুলিশ অতর্কিত হামলা চালালে আমাদের ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় গুলি কিনে পুলিশ আমাদের সন্তানদের বুকে গুলি চালায়। আমরা এই ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন চাই।
আমাদের দাবি অবিলম্বে ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে এবং আমরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
এ ছাড়াও সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে আমরা প্রতিরোধ করি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা ফাঁকা গুলি চালাই।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের শুরুর দিন সকাল থেকে সিলেট মহানগরে যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে দোকানপাট খোলা শুরু করলেও সিলেটে আজ চিত্র ছিল ভিন্ন।
সকাল ১০টার দিকে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ নগরীর কোনো মার্কেট বা দোকান খোলা দেখা যায়নি। এ ছাড়া এসময় অন্যান্য দিন সড়কে কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা চোখে পড়লেও আজ এমন দৃশ্য ছিল না। সড়কে যানবাহনও ছিল কম।
এদিকে সিলেটে এই আন্দোলন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ২০ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এই পর্যন্ত আন্দোলনে সিলেটের দুজন মারা গেছেন। একজন সাংবাদিক ও অপরজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ কর্মকর্তা যুবক শুক্রবার হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলনে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের খেটে খাওয়া মানুষ।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ২৭ জুন ২০২৫ 
