সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে তিনটি ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র উঁচু সড়ক তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক। আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ৩০ বছরেও সড়কটির নির্মাণকাজ হয়নি। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, না হেঁটে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত এ সড়কটির কাজ শুরু করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তবে সড়কটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর উড়ালসেতু প্রকল্পভুক্ত হয় এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। খুব তাড়াতাড়ি এ সড়কের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এলাকাবাসীরা জানান, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক দিয়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন উত্তর বড়দল, উত্তর শ্রীপুর ও বাদাঘাট ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ১২ মাস উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। বাদাঘাট বাজারটি উপজেলার সবচেয়ে বড় একটি বাজার। বাদাঘাট বাজার থেকে উপজেলার কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এ ছাড়াও জেলার তিনটি শুল্ক স্টেশন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী। এসব স্টেশনে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতে এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। উপজেলার খনিজ বালু ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদীতেও এ সড়ক দিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে সারাদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান উপজেলার জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, নীলাদ্রী লেক ও লাকমাছড়াতে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়কও এটি।
সড়কের বাদাঘাট ইউনিয়নের হুসনার ঘাট থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পার হতে হয় ছোট নৌকায়। বাকি এক কিলোমিটার হেঁটে পার হওয়াও কঠিন। সড়কের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের টাকাটুকিয়া সেতুর উত্তর অংশের মাটি প্রতিবর্ষায় সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হুসনার ঘাট থেকে জামালগড় রাস্তার সম্মুখ পর্যন্ত এবং পাতারগাঁও থেকে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
তাহিরপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা সৈজ উদ্দিন বলেন, আমরা অনেকেই বাদাঘাট বাজার থেকে পাইকারি সবজি এনে বিক্রি করি। সবজি আনতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গাড়ি ও নৌকা মিলিয়ে অনেক টাকা পরিবহনে খরচ হয়। কষ্টও অনেক বেশি। রাস্তা ভালো থাকলে এমন দুর্ভোগে পোহাতে হতো না।
ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আজাদ হোসেন বলেন, এ রাস্তায় যাত্রী বা মালামাল নিয়ে চলাচল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। একটু বৃষ্টিতেই কাঁচা রাস্তা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। তখন মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে মালামাল বা যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে এ সড়কে।
তাহিরপুর সদর ইউপি সদস্য তুজাম্মিল হক নাছরুম বলেন, তাহিরপুর- বাদাঘাট সড়কটি উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও এই সড়কের কাজ করতে পারেনি এটি আসলেই দুঃখজনক। শুনেছি এই কাজের টেন্ডার হয়েছে। যারা টেন্ডার পেয়েছে তারা যেন দ্রুত কাজ শুরু করে।
উত্তর বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলো ব্যবসা বাণিজ্যে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ভলো হলে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ কমবে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি তরান্বিত হবে।
তাহিরপুর উপজেলা এলজিডি অফিসের ইঞ্জিনিয়ার সাজু আহমেদ জানান, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি উড়াল সড়কের আওতায় এসেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা কাজ পেয়েছে তারা খুব দ্রুত কাজ শুরু করার কথা। আপাতত ছোটখাট ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় মেরামত করে দেওয়া হয়।
তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার এই এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি তার প্রমাণ এই সড়কটি। বিএনপি সরকারের আমলে এই সড়কের কাজ শুরু করে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতি কোনো নজর দেয়নি। অথচ এই সড়কটি তাহিরপুর উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন