কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কয়রার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলদে ফুলের সমাহার

সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে গেছে মাঠ। ছবি : কালবেলা
সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে গেছে মাঠ। ছবি : কালবেলা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে গেছে মাঠ। শীতকালীন এই মৌসুমে কৃষকরা তাদের জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এখন সেই সরিষা ফুল পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে, যা একটি অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। সরিষা ফুলের হলুদ রঙ কৃষকদের জন্য আনন্দের প্রতীক এবং এর মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনা ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

মাঠের প্রতিটি প্রান্তে সরিষার হলুদ ফুল ফুটে বাতাসে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে। এই দৃশ্য কৃষকদের মনোবল বাড়াচ্ছে এবং তাদের মনে আশার আলো জাগিয়ে তুলছে। খুলনার কয়রা উপজেলার কাটমারচর গ্রামের বিলে এমন চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদে সরিষা ফুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। ফুলগুলো কলি ভেদ করে সুভাস ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। এ যেন প্রকৃতির অপর সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর ছুটি কিংবা অবসর সময়ে শত শত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটছে এ অঞ্চলে। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। সরিষা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা। কেউবা আবার এমন দৃশ্য স্মৃতি হিসাবে ধারণ করে রাখছেন ক্যামেরায়।

কয়রার উত্তরবেদকাশী ইউনিয়নের কাটমারচর গ্রামের বিলে ১৫০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন ৫৮ জন কৃষক। হলুদ সরিষা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য এখন লুটোপুটি খাচ্ছে বিলজুড়ে। কৃষকরা বলেন, সরিষা চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম হয়। তেলের দামও তুলনামূলক ভালো এ কারণে সরিষা চাষে আগ্রহ।

উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সরদার আবু হাসার কালবেলাকে বলেন, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণপানি প্রবেশ করেছিল গ্রামটিতে। এক বছরের বেশি সময় লবণপানির নিচে ডুবে ছিল পুরো কাটমারচর গ্রাম। পরে নদের বেড়িবাঁধ সংস্কার হলে কিছু মানুষ চেয়েছিল বিলের জমিতে লোনাপানি তুলে চিংড়ির ঘের করতে। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন ধান চাষের। সেই থেকে বিলে চাষাবাদ শুরু। এরপর গত বছর একজন কৃষক আমন ধান কাটার পর এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবার সবাই ঝুঁকে পড়ে দেড়শ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

কৃষক সাইফুল্ল্যাহ সরদার বলেন, কাটমারচর বিলে আমি নিজের ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। বিলটিতে তারা আমন ধানের বাইরে কখনও কোনো ফসলের চাষ হতে দেখেননি। লবণাক্ত ও পানির সমস্যার কারণে তিনি কখনো অন্য ফসল চাষ করার চেষ্টা করেননি। এবার প্রথমবারের মতো কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে বারি ১৪ ও ২০ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। তারা তাকে বিনামূল্যে বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন বেশ ভালো ফুল ধরেছে। আশা করা যাচ্ছে, ভালো ফলন হবে।

কাঠমারচর গ্রামের কৃষক পরিমর মণ্ডল বলেন, সরিষা চাষে খুব বেশি পানি দরকার হয় না এবং সেচ ব্যবস্থাও সহজ। তবে, সঠিক সময়ে বীজ বোনা এবং সারের ব্যবহার নিশ্চিত করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ বছর আমরা আশা করছি, ভালো লাভ হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান জানান, কাটমারচর এই মাঠে কৃষক দুই থেকে তিন বিঘার মতো জমিতে সরিষা লাগাত; কিন্তু এ বছর এ বিলে ২০০ থেকে ২৫০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তার মধ্যে আমরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিনে গবেষণা বিভাগ পার্টনার প্রকল্পের আওতায় ১৪৫ বিঘা জমিতে বারি সরিষা ১৪, ১৭ ও ২০ জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে। এই সব জাত দেওয়ার মূলত কারণ হলো- এই মাঠটিতে ২টি ফসল হয়। একটা আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে একটি ফসল পেতে পারে তার জন্য স্বল্পমেয়াদি, কম সময় ও কম খরচে জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে। বারি সরিষা ১৪-এর মেয়াদ ৭৫ দিন, বারি ১৭ এর মেয়াদ ৮০ দিন এবং বারি ২০ এর মেয়াদ ৮০ দিন। বারি সরিষার ফলন হয় ৩ থেকে ৪ মণ আর বারি সরিষা ২০ এর ফলন হয় ৬ থেকে ৭ মণ। তাহলে কৃষক যদি বারি সরিষা ২০ চাষ করে তাহলে অনেক বেশি লাভবান হবে। সাথে সাথে কয়রার দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সরিষা চাষ শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই আনছে না, বরং এটি মাটির উর্বরতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ফসলের ঘনঘন চক্রের ফাঁকে চাষ করা এ ফসল চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। সরিষার এই চাষ কেবল কৃষকদের জন্যই নয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কয়রায় আমন ধান ঘরে তোলার পর বোরো চাষের আগে জমি পতিত থাকত। তাই এবারই প্রথম আমরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিনে গবেষণা বিভাগ উদ্ভাবিত জমিতে শর্ট ডিউরেশন সরিষা ১৪৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। সরিষা ক্ষেতের হলুদ গালিচা কয়রার সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপশি কৃষকদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোজার ঈদের পর দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

ইরানে বড়সর হামলা করবে ইসরায়েল, সমর্থন দেবেন ট্রাম্প!

বিদেশিদের সুখবর দিল সরকার

মামলা করলেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি

সাফায় মুগ্ধ দর্শক

৮৪৮ নেতা-কর্মী নিহতের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ বিএনপির 

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার

ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে প্রস্তুত শিমুল বাগান

পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্ক কর্মচারীদের সংঘর্ষ, আহত ৩০

গোলাপগঞ্জে সাইনবোর্ডে ভেসে উঠল ‘চাচা হাসু আপা কোথায়?’

১০

এক যুগেরও বেশি সময় পর নির্বাচন কমিশনে জামায়াত 

১১

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশন গঠন

১২

মাঘের শেষে ফের দুই বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা

১৩

পাকিস্তানে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

১৪

দলীয় নেতা হত্যায় ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি গ্রেপ্তার

১৫

বিক্ষোভ দমনে যেসব পরিকল্পনা করেছিলেন শেখ হাসিনা

১৬

শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনসমূহ

১৭

টাঙ্গুয়ার হাওরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বনায়ন কার্যক্রম চালু

১৮

আ.লীগপন্থি অধ্যাপককে প্রো-ভিসি নিয়োগের চেষ্টা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৯

মাঘের শেষ দিনে পঞ্চগড়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা

২০
X