চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে প্রতিরাতে বিশাল আকারের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। পুলিশ স্বল্পতার সুযোগে এ কাজ করছে তারা। দিনের বেলা পুলিশের টহল থাকার কারণে বালু ব্যবসায়ীরা তেমন সুবিধা করতে পারে না। কিন্তু রাতে তারা স্বশস্ত্র অবস্থায় হালদায় ড্রেজার নামায় এবং রাতভর বালু উত্তোলন করে। সারারাত ধরে ড্রেজার দিয়ে চলে হালদা নদীর বালু উত্তোলন। এতে ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত’ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী।
জানা যায়, মা মাছ ও বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষায় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল ও খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা এখন কেবল কাগজেই। প্রজনন মৌসুমের (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) ছয় মাস ছাড়া বাকি সময় চলাচল করছে বালু ও পাথর বহনকারী বার্জ (পণ্য পরিবহনের নৌযান)।
৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ নদীতে বর্তমানে রাউজানের দেওয়ানজিহাট, কচুখাইন, মদুনাঘাট, উত্তর মাদার্শার কয়েকটি স্থান, আমাতুয়া বাজার এলাকা, মাইজ পাড়া, উত্তর গুজরা, মাছুয়াঘোনা, ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, চান্দগাওয়ের ছায়ারচর, মোহরা এলাকায় অর্ধশত ড্রেজার দিয়ে রাতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। পাশাপাশি ইঞ্জিন চালিত নৌ চলাচল তো রয়েছেই। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির মাছ প্রজননকেন্দ্রটি হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পাড় থেকে বালু উত্তোলনের কারণে দুই পাড়েই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামীতে হালদার পরিবেশ নষ্ট হয়ে মাছ প্রজনন পুরোপুরি ব্যাহত হবে। এছাড়াও হালদা নদী ডলফিনের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। বালু ব্যবসায়ী ও ইঞ্জিন চালিত নৌযানের অত্যাচারের ফলে প্রায়ই মৃত ডলফিন ভেসে উঠে। যার প্রায় সবগুলোই আঘাতজনিত কারণে হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, হালদা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় উপজেলার বদনাতলী পার্বত্য রেঞ্জে উৎপন্ন হয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা, ভূজপুর থানা, হাটহাজারী উপজেলা , রাউজান উপজেলা এবং মহানগরীর চান্দগাঁও থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালুরঘাটে কর্ণফুলি নদীতে মিশেছে।
প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদা নদীতে এসে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউসের মতো কার্প জাতীয় মাতৃমাছ প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। মাছেরা মেঘলা দিনে দুপুর এবং বিকেলে ডিম ছেড়ে থাকে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে তিথি বলা হয়ে থাকে। তিথির পূর্বেই স্থানীয় জেলে এবং ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে অবস্থান নেন এবং ডিম সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত ডিমগুলি ফোটানোর জন্য নদীর তীরে কৃত্রিম ছোট মাটির কুয়ায় নেওয়া হয় এবং কার্প পোনা উৎপাদন করে থাকে।
হালদা নদীর দায়িত্বে নিয়োজিত নৌপুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, লোক স্বল্পতার কারণে আমরা সব জায়গায় অভিযান চালাতে পারছি না। বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রমজানের পর তাদের লোকবল বাড়াতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা হালদাকে রক্ষার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন