কোরবানি ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় কিশোরগঞ্জের খামারিরা। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে গরুর পরিচর্যা। যত্নে কোনো কমতি নেই। গরম থেকে বাঁচতে ফ্যানের নিচে রাখা ও মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে গোসল করিয়ে রাখা হচ্ছে পরিচ্ছন্ন। এসব খামারে ছোট-বড় সব আকারের পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারে দেশি জাতের গরু ছাড়াও রয়েছে ফ্রিজিয়ান, শাহী ওয়াল, ব্রাহামা, ইন্ডিয়ান বোল্ডারের মতো বড় জাতের গরু। এছাড়াও মহিষ, বলদ ও গয়াল। প্রাকৃতিকভাবে ঘাস, খড় কুটা, ভুসি খাইয়ে বড় করায় খামারে এসব গরুর চাহিদাও অনেক। বাজারে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ক্ষতিকর হরমোন কিংবা ইনজেকশনের ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু পালন করা হয়েছে। ভারতীয় গরুর উপর নির্ভর না করে নিজেদের দেশীয় গরুতেই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন খামারিরা।
খামারি জুনায়েদ আশরাফ সানি বলেন, আমার খামারে কোরবানি উপযোগী ৬০টি গরু রয়েছে। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু আছে। কোরবানি উপলক্ষে যে গরুগুলো লালনপালন করেছি সেগুলো ৮-৯ মাস ধরে লালনপালন করা। যেগুলো মাংস উৎপাদনের জন্য লালনপালন করা হয় সেগুলো ৩-৪ মাস। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত গরুপ্রতি প্রতিদিন আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন দেশীয় খাবার ভুসি, কুড়া, খৈল, ঘাস, খের খাওয়ানো হচ্ছে। দেশে গোখাদ্যের দাম বেশি। তাই দাম পুষিয়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কা। আশা করছি বাহির থেকে কোনো গরু আনা হবে না। দেশীয় গরুর মাধ্যমে চাহিদা মেটানো সম্ভব। খামার থেকেই গরুগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপারি ও সাধারণ মানুষ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১টি, যা জেলার চাহিদা পূরণ করেও ৩২ হাজার ৪৫৮টি পশু দেশের চাহিদা পূরণ করবে। জেলায় ৭০ হাজার ৭১টি ষাঁড়, ৪ হাজার ৬টি বলদ, ১৮ হাজার ৫৫৯টি গাভি, ১ হাজার ২৮৮টি মহিষ, ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৬টি ছাগল, ৫ হাজার ৫১৬টি ভেড়া ও অন্যান্য ৩৩টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলায় মোট ৬৩টি গরুর হাট রয়েছে। এসব হাটে ক্রেতাদের নিরাপদ পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৪০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদরে ৪টি, করিমগঞ্জ ৪টি, তাড়াইল ৩টি, হোসেনপুর ৩টি, পাকুন্দিয়া ২টি, কটিয়াদী ৬টি, কুলিয়ারচর ২টি, ভৈরব ৩টি, বাজিতপুর ৩টি, নিকলী ২টি, ইটনা ২টি, মিঠামইন ৪টি, অষ্টগ্রাম ২টি টিম কাজ করবে।
মন্তব্য করুন