সাধারণত বর্ষাকালে ফোটে কদম ফুল। এজন্য কদম ফুলকে বর্ষাদূত বলা হয়। তবে প্রকৃতি বদলে গেছে। প্রাকৃতিক ঋতুবৈচিত্র্যের সীমাবদ্ধতার নিয়ম ভেঙে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি রাঙিয়ে গ্রীষ্মেই ফুটেছে বর্ষার আগমনি বার্তা বহনকারী কদমফুল।
ষড়ঋতুর এদেশে প্রতিটি ঋতুতেই কোনো না কোনো ফুল ফোটে। কোনো কোনো ফুল কোনো কোনো ঋতুর জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এমনই এক ফুল কদম বর্ষা ঋতুর জন্য বিখ্যাত। কদম ফুলকে বর্ষার রানিও বলা হয়। তবে এ ফুল আষাঢ় মাসে ফোটার কথা থাকলেও ফুটেছে জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই। এখন এই উপজেলার প্রায় কদম গাছেই শোভা পাচ্ছে কদম ফুল।
জানা গেছে, কদম বহুবর্ষজীবী গাছ। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যান্থোসেফালাস ইন্ডিকাস। এর ইংরেজি নাম বারফ্লাওয়ার ট্রি, লারাণ, লেইচহার্ট পাইন। এটি রুবিয়াসি পরিবারের নিওলামার্কিয়া গণের বৃক্ষ। এটি নীপ নামেও পরিচিত। এ ছাড়াও এটি বৃত্তপুষ্প, মেঘাগম প্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, ললনাপ্রিয়, পুলকি ও সুরভি নামও পরিচিত। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এ গাছে ফুল ফোটে। কদম ফুল অন্যান্য ফুল থেকে ব্যতিক্রম বলে এ ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি।
কদম শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধনই করে না, এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। ডায়াবেটিস, জ্বর, পায়ের তালু জ্বলা, ব্রণ সৃষ্ট ক্ষত ও গ্রন্থিস্ফীতি রোগে ভেষজ ঔষধ হিসেবে কদমের ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া ব্যথানাশক হিসেবেও কদম পাতা বেশ উপকারী। কদম ফুল সিদ্ধ করা পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে কদম গাছের বিভিন্ন অংশ বহুকাল আগে থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, বসতবাড়ি ও জলাশয়ের পাড়ে চোখজুড়ানো বর্ষারাণী কদম ফুল ফুটেছে। আবহমানকাল থেকে কদম ফুল বর্ষাকালে ফুটতে দেখা গেলেও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালেই কদমফুল ফুটেছে। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা-হলুদ বর্তুলাকার এ ফুলের অপরূপ শোভায় প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর সাজে সেজে উঠেছে।
অসময়ে ফোটা এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন সবাই। সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অবাকও হচ্ছেন অনেকে। ভিন্ন সৌন্দর্যের এ ফুল গ্রামীণ প্রকৃতিকে অলংকৃত করেছে। এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে উঠতি বয়সী কিশোরী ও তরুণীদের খোপায় শোভা পাচ্ছে এ ফুল।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালহা মাঈনুদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় বর্ষাকালে কদম ফুল ফুটতে দেখতাম। তবে গেল কয়েক বছর ধরে অসময়ে কদমফুল ফুটতে দেখছি। কদম ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। এ ফুল অন্যান্য ফুলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, কদম ফুটতে দেখলেই মনেপ্রাণে বর্ষাকাল ভেসে ওঠে। তবে প্রকৃতির এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এখন বর্ষাকালের আগেই গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। যদিও অসময়ে ফোটা কদম সময়ে ফোটা কদমের তুলনায় কিছুটা ছোট এবং ক্ষণস্থায়ী। তবে প্রকৃতির এই পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনই অনেকাংশে দায়ী।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, কদম বাংলাদেশের জন্য একটি অতিপরিচিত গাছ। বর্ষা এলেই কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজে ওঠে। তবে প্রকৃতির এ নিয়মেরও পরিবর্তন ঘটেছে। এখন গ্রীষ্মকালেও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, কদম গাছের বিভিন্ন অংশ বহুকাল আগে থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে মানুষের নানা রোগে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ গাছের পাতা বর্তমান সময়ের আলোচিত রোগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী। এ ছাড়া মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, কদম ফুল বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীনকাল থেকেই এ ফুলের প্রতি মানুষের একটা আবেগের জায়গা রয়েছে। কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসেও কদম এসেছে বিভিন্নভাবে।
তিনি আরও বলেন, কদম সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ফোটে। তবে পরিবেশ দূষণের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনে কদম ফুলকে গ্রীষ্মেও ফুটতে দেখা যায়।
মন্তব্য করুন