সৌন্দর্য বর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে ১৩০০ মিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প সমালোচনার মুখে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই জোয়ারের পানিতে গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সড়কটির কিছু অংশ সমুদ্রে ধসে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা গাজী হানিফ বলেন, গাইড ওয়াল ছাড়া এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক।
এ ঘটনার পরপরই ২৯ মে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রবিউল ইসলাম ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন সাদেককে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, উপজেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা উল্লেখ থাকলেও গত দুপাশে তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
গত কয়েকদিনের লঘুচাপের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এই ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ ও পাশের সবুজ বেষ্টনীর প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার নিম্নচাপ ও আমাবস্যার জোয়ের প্রভাবে সড়কটির পুরোপুরি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও সৈকত লাগোয়া বিভিন্ন স্থাপনা ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, ডিসিপার্ক রয়েছে ঝুঁকি মধ্যে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পুরো এলাকাটিই যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ ঘটনায় শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে সৈকত রক্ষার দাবিতে ডিসি পার্ক সংলগ্ন বিধ্বস্ত সড়কটিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে কুয়াকাটার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, অব্যাহতভাবে ভাঙনের ফলে সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় পর্যটকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে যা কুয়াকাটার পর্যটন অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা দ্রুত সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ এবং ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটিজ বৃদ্ধির দাবিতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা গেছে, পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব ছগির মোল্লার মালিকানাধীন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, আরেক সহযোগী পৌর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেনের মালিকানাধীন মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও সাবেক পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম মালের মালিকানাধীন এস এম ট্রেডার্স স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাজ পায় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইট ও বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এরইমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া সমুদ্র রক্ষা নিছক বোকামী। নিজস্ব লোকজন দিয়ে প্রকল্পটাকে যারা চেটেপুটে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
পর্যটন ব্যবসায়ী জনী আলমগীর বলেন, কুয়াকাটা একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী এটিকে এখনই রক্ষা করা জরুরি।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, প্রতিবছর জিওব্যাগ দিয়ে একটি নামমাত্র প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যা সৈকত রক্ষায় কোনো কাজে আসছে না। কুয়াকাটায় রক্ষায় দরকার স্থায়ী বাঁধ।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান হাওলাদার বলেন, প্রতি বছর জিও ব্যাগের নামে অর্থ লোপাটের যে মহোৎসব হয় সেটিকে বন্ধ করে গ্রোয়েন বাঁধের স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করলে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা পাবে। পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করলে এভাবেই সরকারের কোটি কোটি টাকা ভেস্তে যাবে।
সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক বলেন, ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প। ইতোমধ্যেই ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩ কোটি টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করিয়ে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ডিসি পার্ক থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার জায়গা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুয়াকাটা পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন