সাভার (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জীবনযুদ্ধে বৈঠা হাতে সংগ্রামী নারী মঞ্জিলা বেগম

মঞ্জিলা বেগম। ছবি : কালবেলা
মঞ্জিলা বেগম। ছবি : কালবেলা

সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজীখালি নদীর বুকে বৈঠা হাতে দেখা মিলবে অসহায় সংগ্রামী নারী মঞ্জিলা বেগমের (৪৫)। প্রতিদিন কাক ঢাকা ভোরে ঘর থেকে নৌকার বৈঠা হাতে বেরিয়ে যান তিনি রাত পর্যন্ত খেয়া ঘাটের মাঝি হিসেবে কাজ করেন।

নদী তীরবর্তী গাজীবাড়ী এলাকায় ছোট্ট ভাঙা টিনের ঘরেই তার বসবাস। সেখানে দুই মেয়ে রুবিয়া (১৪), রুমানা (৯) ও স্বামী শফিক খানকে নিয়ে বসবাস তার। প্রতিবন্ধী বড় মেয়ে রুবিয়া জন্মের পর থেকে উচ্চতায় বেড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া স্বামী শফিক খান দীর্ঘদিন ভুগছেন শ্বাসকষ্টে। তাই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকেই।

আগে তার স্বামী কৃষিকাজের পাশাপাশি খেয়া নৌকা চালালেও অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এখন আর কোন কাজ করতে পারেন না। কোন ছেলে সন্তানও নেই তাদের। তাই বর্তমানে সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এই মঞ্জিলা বেগমই।

মঞ্জিলা বেগমের স্বামী শফি খান কালবেলাকে বলেন, আমি শারীরিকভাবে অনেক অসুস্থ। সেজন্য আমি এখন কোন কাজকর্ম করতে পারি না। তাই আমার স্ত্রী একজন মহিলা মানুষ হয়েও খেয়া নৌকা চালিয়ে উপার্জন করে সংসার চালায়। এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের এবং লজ্জার, কিন্তু আমার কিছুই করার নেই আমি অসহায়।

মঞ্জিলা বেগমের বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার বলেন, মা সকালে ফজরের আজানের সময় নৌকা চালাতে বের হয় আর বাসায় ফেরে রাত ৯-১০টার দিকে। সারাদিন আমরা মায়ের দেখা পাই না। আমার বাবা অসুস্থ হওয়ায় সে কোন কাজ করতে পারে না।

মঞ্জিলা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েটি প্রতিবন্ধী। আমার স্বামী যখন সুস্থ ছিল তখন সেই টুকটাক কৃষি কাজ করে সংসার চালাত। কিন্তু আমার স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে সে কোন কাজ করতে পারে না। একজন নারী হয়ে নৌকার বৈঠা হাতে তুলে নিয়েছি। কাজটি অনেক কষ্টের। রাত বিরাতে নৌকা বাইতেও ভয় করে। কেউ যদি আমাদের সাহায্য করে একটি দোকান করার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে কষ্টের কাজ করতে হতো না।

তিনি আরও বলেন, খেয়া পারাপারে প্রতিজন নদী পার হতে ১০ টাকা করে দেন। তবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা বাবদ দেন ৫ টাকা। দিন শেষে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। এছাড়া স্থানীয়রা সামর্থ অনুসারে বাৎসরিক ১৫-২০ কেজি ধান দেন। আমার কোনো ছেলে নেই। আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, কিছুদিন পর আমিও চালাতে পারব না। তাই যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হতো তাহলে একটি দোকান দিয়ে চলতে পারতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জুবায়ের খান বলেন, আমি এই এলাকারই বাসিন্দা। উনি আমাদের প্রতিবেশী। আমি ছোটবেলা থেকেই এই পরিবারটিকে দেখে আসছি। আগে মঞ্জিলা চাচির স্বামী শফি চাচা অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাত। কিন্তু তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে চাচিই এখন খেয়া পারাপারের কাজ করে সংসারটা চালান। তাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই আমরা স্থানীয়ভাবে যে যার মতো তাদের সহায়তা করে থাকি। তবে সমাজের বিত্তবানরা যদি এই পরিবারটির প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে তারা আরও সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারতেন।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মানবিক। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পরিবারটিকে সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।

সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। এখন খোঁজ খবর নিয়ে তার যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী সেটির ব্যবস্থা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, বয়স ৪৫ হলেও আবেদন

রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

অবশেষে সুলাইমানিয়ার আকাশপথ খুলে দিল তুরস্ক 

বাস কাউন্টারে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৬

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

ঐতিহাসিক আল-রাবিয়া মসজিদ আবার খুলে দেওয়া হয়েছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুগ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ ভাইয়ের

চবির দুই হল সংসদের ফল পুনর্গণনার ঘোষণা

১০

টিভিতে আজকের খেলা

১১

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ 

১২

চট্টগ্রামে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে ভবনে আগুন

১৩

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে

১৪

১৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

ঢাবির শোক দিবসে জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালন

১৬

চাকসুতে জয় পেলেন সাদিক কায়েমের ভাই আবু আয়াজ

১৭

চাকসুতে ২৬ পদের ২৪টিতেই শিবিরের জয়

১৮

চাকসুতে ভিপি ও জিএস পদে শিবির, এজিএস পদে ছাত্রদল জয়ী

১৯

স্লোগানে-স্লোগানে ফের উত্তাল চবি

২০
X