আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৭ এএম
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট ঔষধি নিম

প্রকৃতির এক অনন্য উপহার নিমগাছ। ছবি : কালবেলা
প্রকৃতির এক অনন্য উপহার নিমগাছ। ছবি : কালবেলা

প্রকৃতির এক অনন্য উপহার নিম তার অসামান্য ঔষধি গুণাবলির জন্য বেশ পরিচিত একটি ঔষধি গাছ। এটি আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও লোকজ চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকেই বেশ সমাদৃত। এই গাছের পাতা, ছাল, মূল, ফুল-ফল, বাকল ও তেল মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এ গাছ।

জানা গেছে, নিম একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম আজাদিরাচটা ইন্ডিকা। এর ইংরেজি নাম নিম। এটি ম্যালিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। নিম একটি বহুবর্ষজীবী চিরহরিৎ বৃক্ষ। এ গাছ আকৃতিতে সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর কাণ্ডের ব্যস ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ডালের চারপাশে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি যৌগিক পাতা জন্মে। নিমের পাতা অনেকটা কাস্তের মতো বাঁকানো। পাতার রং সবুজ। নিমগাছে ছোট ছোট সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে।

ছোট ছোট সবুজ রঙের আঙুরের মতো ফল ধরে। এর ফল পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। এ গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে প্রায় ১০ বছরের মতো সময় লাগে। এটি যে কোনো মাটিতে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। এ গাছের সবকিছুই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ গাছের কাঠ বেশ শক্ত এবং ঘুণে ধরে না। এমনকি এ গাছের কাঠ উইপোকাও খেতে পারে না।

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসকরা জানান, নিম বহুকাল আগে থেকে মানুষের নানা রোগ নিরাময়ে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এলোপ্যাথি চিকিৎসা যখন এতটা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি, তখন মানুষ গাছগাছালির মাধ্যমে চিকিৎসা নিত। সে সময় মানবদেহের নানা অসুখ-বিসুখে এই নিমগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং এখনো রেখে আসছে। নিমগাছের পাতা, ছাল, মূল, ফুল-ফল, বাকল ও তেল মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকরী ওষুধ। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে নিম খুবই কার্যকর।

নিমগাছের পাতা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ত্বকের যে কোনো রোগ সারাতে নিমগাছের পাতা বা নিম তেল বেশ কার্যকরী। নিমের তেল ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয়। মাথার খুশকি দূর করে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। নিমপাতা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেটের গ্যাস, অম্বল ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেয়। রক্ত পরিশোধনেও নিমের ভূমিকা অপরিসীম। কৃমিনাশক হিসেবেও নিমের রস বেশ কার্যকরী। ক্ষুধামান্দ্য, বদ ঢেকুর ও বমিভাব সারাতে এ গাছের ফুল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

এ ছাড়া চোখের রোগ ও মাথাব্যথায়ও নিমের ফুল এবং পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিমপাতা বেটে পেস্ট করে কাটা ছেঁড়া বা যে কোনো ক্ষততে লাগালে আরোগ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে যে কোনো চর্মরোগ সারাতে নিমপাতার জুড়ি নেই। নিম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাই এটিকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকও বলা হয়।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, একসময় বন-জঙ্গল ছাড়াও প্রতি বাড়িতেই নিমগাছের উপস্থিতি ছিল। সে সময় মানুষ মনে করত বাড়িতে নিমগাছ থাকলে রোগবালাই কম হয়। আমাদের মা-চাচিরা নানা রোগে নিমপাতা ও নিমগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করতেন। এতে মানুষ সুস্থও হয়ে উঠত। তবে এখনকার মানুষজন গাছগাছালির প্রতি ততটা আকৃষ্ট নয়। তাই নিমগাছের মতো অনেক উপকারী গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর দশটা বাড়ি ঘুরেও নিমগাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

স্থানীয় আরেক প্রবীণ বাসিন্দা ছন্দু মিয়া বলেন, কিশোর বয়সে আমি নিজেও অনেক নিমগাছ লাগিয়েছিলাম। এখন সেসব গাছ আর নেই। ছেলেরা বড় হয়েছে, নাতিরাও বড় হয়েছে। যে কারণে বাসস্থানও বাড়াতে হয়েছে। এতে করে নিমগাছ কাটতে হয়েছে। একই চিত্র প্রায় সবখানে। এসব কারণেই দিন দিন নিমগাছ কমে যাচ্ছে। এখনকার মানুষ বনাজি চিকিৎসা বিশ্বাস করে না। অথচ আল্লাহর দেওয়া এসব গাছগাছালি চিকিৎসাই আদিকালের মানুষ করে এসেছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা (ইউনানি) কালবেলাকে বলেন, প্রকৃতিতে জন্মানো উপকারী ও ভেষজ গুণসম্পন্ন ঔষধি গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম নিমগাছ। এ গাছের ব্যাপক ঔষধি গুণ রয়েছে। চর্মরোগসহ মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দিন দিন প্রকৃতি থেকে এ গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষীণ হয়ে আসছে ভেষজ চিকিৎসার সম্ভাবনা। আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে এবং ভেষজ চিকিৎসার সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে নিমের মতো অসংখ্য ঔষধি গাছ রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে ‘মধুর’ সমস্যায় বাংলাদেশ দল

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপির শ্রদ্ধা

বিএনপিকে ধ্বংস করতে বারবার চেষ্টা হয়েছে: মির্জা ফখরুল 

টিকটকে এবার যেসব সুবিধা যোগ হলো

মোবাইলে যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

হত্যা মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব জিয়াউল গ্রেপ্তার 

শুটিং শেষ করে শাহিদ কাপুরের আবেগঘন স্ট্যাটাস

৬০০ বিঘার এই বিলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা 

ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ে আফগানিস্তান, নিহত বেড়ে ৫০০

নুরের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানালেন রাশেদ 

১০

কে এই লিভারপুলের ২০০০ কোটি টাকার স্ট্রাইকার?

১১

অনার্স চতুর্থ বর্ষের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন

১২

বিশ্বের মুসলিমদের উদ্দেশে ইরানের প্রেসিডেন্টের বার্তা

১৩

সুসজ্জিত গাড়িতে পুলিশ সদস্যের রাজকীয় বিদায়

১৪

বিদ্রোহী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিহত, ইয়েমেনের পক্ষে ইরানের হুংকার

১৫

চোখের পাতা লাফানো কি অশুভ, নাকি কোনো রোগের লক্ষণ

১৬

সিডনিতে রুশ কনস্যুলেটের গেটে গাড়ির ধাক্কা, অতঃপর...

১৭

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

১৮

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

১৯

ফাইনালে হারের পর সুয়ারেজের বিতর্কিত কাণ্ড!

২০
X