খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবনের দ্বার

সুন্দরবন। ছবি : সংগৃহীত
সুন্দরবন। ছবি : সংগৃহীত

টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে সুন্দরবনে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে পর্যটক, বাওয়ালি, জেলে ও মৌয়ালরা। এরই মধ্যে ১১টি পর্যটনকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য এলাকাগুলোয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ। বনের অভয়ারণ্যসহ পুরো সুন্দরবনজুড়ে নতুন উদ্যমে শুরু হবে জেলেদের মাছ ধরা ও পর্যটকদের আনাগোনা।

জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটন থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখে বন বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত কয়েক বছর থেকে এ কার্যক্রম চলছে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর সেটি আবার খুলে দেওয়া হয়।

এদিকে, সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে খুলনার ট্যুর অপারেটররাও। নতুন করে রং করা হয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো। জানা গেছে, খুলনার জেলখানা ঘাট থেকে ছোট বড় ৭০টির মতো জাহাজ সুন্দরবনে যায়। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ ১১টি পর্যটনকেন্দ্র। সুন্দরবনে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বনে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ফরেস্ট স্টেশনগুলোতে অনুমতি পত্রের জন্য ভিড় করছেন মৎস্যজীবীরা।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন (টোয়াস) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ৬৫টি এবং এর বাইরে ৫-৭টি লঞ্চ খুলনা থেকে পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণে নিয়ে যায়-আসে। তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্যুর গাইড রয়েছে প্রায় দুইশ। তিন রাত দুই দিন অথবা দুই রাত তিন দিনের প্যাকেজে প্রতিজন পর্যটকের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৭-৮ হাজার থেকে ২২-২৩ হাজার টাকা। নতুন করে আরও একাধিক লঞ্চ এই খাতে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

জনপ্রতি দেশি পর্যটকের জন্য বন বিভাগকে রাজস্ব দিতে হয় ১ হাজার ৫০ টাকা এবং বিদেশি হলে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। মোংলা থেকে ট্রলার ও জালিবোটে করে সুন্দরবনের করমজল ও হাড়বাড়িয়া এলাকায় ঘুরতে যান পর্যটকরা। সেখানে এই কাজে নিযুক্ত আছে অর্ধশতাধিক নৌযান। এ ছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকেও একইভাবে পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণে যান। তবে এই ট্যুরগুলো সকাল-সন্ধ্যা।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ ১১টি পর্যটনকেন্দ্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকসমাগম না থাকায় হরিণ, বানরসহ বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বেড়েছে। এখন সকাল-বিকেল হরিণের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। এ ছাড়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাছ ধরা ও পর্যটকদের জন্য অনুমতিপত্র (পাস) ইস্যু শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সব টহল ফাঁড়িকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড বলেন, দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনের দ্বার খুলে দেওয়ায় ট্যুর সংশ্লিষ্টরা উচ্ছ্বসিত। খুলনা থেকে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লঞ্চ ও জাহাজ প্রস্তুত আছে। প্রথম দিন ৪-৫টি জাহাজ সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা দেবে। আমরা আশা করছি প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুন্দরবনপ্রেমী পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় রূপ বদলায় ছয়বার। প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সুন্দরবন খুব ভোরে এক রূপ। দুপুরে অন্য রূপ। পড়ন্ত বিকেলে আরেক রূপ। সন্ধ্যায় সাজে ভিন্ন রূপে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। চাঁদনি রাতে এই বনের মোহনীয় রূপ পর্যটকদের মোহিত করে। কচিখালী সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার রয়েছে সুযোগ।

মৌয়াল, জেলে ও বাওয়ালি মিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, নীলকমল, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ-মান্দারবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত এ তিনটি জোনের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকাকে পৃথিবীর ৫৫২তম বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে।

সুন্দরবনে প্রতি বছর মধু আহরণ মৌসুমে অন্তত ১ হাজার মৌয়াল বনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া জেলে ও বাওয়ালি মিলে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ এ বনের ওপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের মোট আয়তনের মধ্যে বনের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জল ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। এ বনে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি নদনদী ও খাল। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিণ, নোনা পানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানের বিপক্ষে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চাইলেন মোদি

১ সেপ্টেম্বর: কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

বিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

ডিএমপির দুই অতিরিক্ত কমিশনারের দপ্তর বদল

মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যে জেলায়

উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ফেলোশিপ পেলেন মহিলা দল নেত্রী সুমাইয়া

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে বড় নিয়োগ

আজ বিশ্ব চিঠি দিবস : হারিয়ে যাওয়া আবেগের দস্তাবেজ

বিতর্কিত পেনাল্টির পরও রায়োর সঙ্গে বার্সার ড্র

বিদেশ ভ্রমণের সুবিধাসহ স্কয়ার গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১০

আরেক দেশে হামলা করে ভবন গুঁড়িয়ে দিল ইসরায়েল

১১

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে আজকের খেলা

১২

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ২০ জনের বেশি নিহত, কাঁপল পাকিস্তানও

১৩

সোমবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৪

১ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

আজ বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, থাকছে যেসব কর্মসূচি

১৬

শিক্ষার্থীদের গালি দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

১৭

ফরিদপুরে দুদকের মামলায় খাদ্য কর্মকর্তা কারাগারে

১৮

বগুড়ায় স্ত্রীর মামলায় স্বামীর জেল-জরিমানা

১৯

‘ক্ষমতায় এলে নারীদের নামে ফ্যামিলি কার্ড দেবে বিএনপি’

২০
X