সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমসহ পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) করেছেন আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ (গোলাপগঞ্জ আদালত) তাদের এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
পাঁচ সরকারি কর্মকর্তা হলেন- সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সরোয়ার আলম, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নূরের জামান চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র পাল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ, ফুলবাড়ি ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গোলাপগঞ্জের ঘোষগাঁও গ্রামে একই পরিবারের নারীসহ চারজনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করেন গোলাপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ। এর মধ্যে ৩টি আইনে একজনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা এবং নারীসহ বাকি তিনজনকে একমাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরদিন ২৮ আগস্ট সিলেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদের রায় বাতিল ও জামিন চেয়ে আপিল মামলা করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। এ ঘটনা নিয়ে নালিশা ভূমির মূল মালিক রিয়াদ আহমদ চৌধুরী গত ৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ গোলাপগঞ্জ আদালতে এসিল্যান্ড ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদসহ পাঁচজনকে বিবাদী করে নিষেধাজ্ঞার মামলা করলে, বুধবার আদালত বিবাদীগণকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন।
আপিল মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নালিশা ভূমির মূল মালিক রিয়াদ আহমদ চৌধুরীসহ অন্যরা। ২০২৩ সালের ৮ জুন রিয়াদ আহমদ চৌধুরী, চেরাগ আলী ও তার অপর দুই ভাইদের নালিশা ভূমি দেখাশুনাসহ মামলা মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিশেষ আমমোক্তারনামা সম্পাদন করেন।
এর আগে ২০১৩ সালে রিয়াদ আহমদ চৌধুরী গং ওই নালিশা ভূমি নিয়ে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ (গোলাপগঞ্জ) আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে (রাষ্ট্রপক্ষ) বিবাদী করে স্বত্ব মোকদ্দমা দায়ের করেন। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল সিনিয়র সহকারী জজ গোলাপগঞ্জ আদালত উক্ত মামলায় বাদী রিয়াদ আহমদ চৌধুরী গং এর পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। আমমোক্তার গ্রহীতা ও ভ্রাম্যমাণ আদলাতে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দাবি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের রায়ের বলে বৈধভাবে নালিশা ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে আছেন।
আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও সিলেটের গোলাপগঞ্জে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একই পরিবারের চারজনকে কারাদণ্ড দেওয়ায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ (গোলাপগঞ্জ আদালত) তাদেরকে এ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
মামলার বাদী রিয়াদ আহমদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমার নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা দায়েরের পর আদালত এসিল্যান্ডসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে শোকজ করেছেন। আমি আশাবাদী আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাব।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ বলেন, আদালত থেকে এখনও কোনো নোটিশ পাইনি। নোটিশ আসলে আমি আইন অনুযায়ী জবাব দেব।
শোকজের বিষয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আদালত থেকে যখন নোটিশ আসবে তখন আমরা বুঝতে পারব কি ধরনের শোকজ। তখন আমরা বলতে পারব।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, একটি সরকারি জায়গায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযানে গিয়েছিলেন। এ সময় কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা তহশিলদারকে মারধর করেছেন। মূলত সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ায় তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালত থেকে কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ এখনও পাইনি। পেলে আমরা আমাদের জবাব দেব।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ (সদর) আদালত সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমকে শোকজ করেছেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, দি সিলেট খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (এসকেআইএসসি) দুই শিক্ষক ও ভাইস প্রিন্সিপালকে বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ শোকজ পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন