গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রামদেব দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে নেই আধুনিক কোনো খেলাধুলার সরঞ্জাম। খেলাধুলা করার যে মাঠটুকু আছে সেটিতেও করা হচ্ছে ধানসহ মাছচাষ। ফলে খেলাধুলা ও বিনোদন বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ধান ও মাছ চাষ করায় খেলাধুলার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রধান শিক্ষক মাঠটি পাশের শাহিন নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে বন্ধক দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামদেবে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মাধ্যমিক স্তরের এই বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। আর জমির পরিমাণ ১৫০ শতক। কিন্তু এত পরিমাণ জমি থাকার পরও খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে গেলেই চোখে পড়বে জীর্ণশীর্ণ কয়েকটি রুম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি টিনশেড বিল্ডিং। রয়েছে বিদ্যালয়ের নতুন একতলা ভবনের সামনে সাড়ে ৩ বিঘা মাঠ। সেই মাঠজুড়ে রোপণ করা হয়েছে ধানের চারা। আর ধানের সঙ্গে করা হয়েছে সমন্বিত মাছচাষ। আগে এ মাঠেই ক্রিকেট ও ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলা খেলতেন শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া নিজের স্বার্থেই মাঠটি স্থানীয় প্রভাবশালী শাহীন মিয়ার নিকট বন্ধক দিয়েছেন। ফলে বছর কয়েক ধরেই মাঠে আর খেলাধুলা করতে পারছেন না তারা। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় তাদের সময় কাটে এখন শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা কিংবা বিভিন্ন দোকান বা কাছের কোনো বাজারে। ফলে বিষণ্নতায় ভুগছেন তারা।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ করায় নিজের নিরক্ষর মামাকে দীর্ঘদিন সভাপতি বানিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। চাকরি তো দেনই নাই, উপরন্তু টাকা ফেরত চাইতে গেলে পাত্তাই দেননি ওই প্রধান শিক্ষক। ফলে বেকারত্বে ভুগছেন নিয়োগপ্রত্যাশী ভুক্তভোগী ৩ যুবক।
সাড়ে তিন বছর ধরে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পড়িয়েছেন পাশের রামধন গ্রামের আউয়াল খন্দকার। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘মাসিক পাঁচ হাজার টাকা চুক্তিতে শিক্ষকতা করেছি সাড়ে তিন বছর ধরে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করালেও একটি টাকাও দেননি প্রধান শিক্ষক। পরে টাকার জন্য চাপ দিলে স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। আমি তাও দিয়ে দেই; কিন্তু কথা রাখেননি তিনি। তা ছাড়া হটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘদিনের মতিনপুর নামক ডাকঘরটি। পাশাপাশি আত্মসাৎ করেছেন মসজিদের টাকাও।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।
চাকরি দেওয়ার নাম করে ৩ জনের থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জানিয়ে সাবেক শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিলেও চাকরি দেননি তাদের। ফেরত দেননি টাকাও।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়ার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এইচ এম মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য চেষ্টা করছি।
রামদেব দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন