ভক্তির দীপশিখায় আলোকিত মন্দির প্রাঙ্গণ, প্রার্থনার সুরে ভেসে থাকা শান্তিময় সকাল—এরই মাঝে পারভেজ মল্লিক হাত মেলালেন সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে। শুভেচ্ছা আর অনুদানের উষ্ণতায় তিনি ছুঁয়ে গেলেন এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রাণ, যেন নির্বাচন-পূর্ব সমাগম রূপ নিল এক মিলনোৎসবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম পারভেজ মল্লিক। যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি দীর্ঘদিনের।
সম্প্রতি খুলনা-৪ আসনে ব্যাপক গণসংযোগ, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং স্থানীয় নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে তার দেওয়া সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে গেছে তেরখাদা থেকে দিঘলিয়ার প্রতিটি কোনায় কোনায়।
স্থানীয় সনাতন ধর্মের নেতারা বলছেন, অন্যসব রাজনৈতিক নেতাদের থেকে ব্যতিক্রম পারভেজ মল্লিক। তিনি মানবিকতা ও ধর্মীয় শিষ্টাচারের এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের এই অঞ্চলে আগে অনেক নেতায় এসেছে; কিন্তু আমরা তাদের কখনো কাছ থেকে পাইনি। নির্বাচনের সময় ছাড়া তাদের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু পারভেজ মল্লিক যেভাবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি এবং আশাবাদী যে তিনি ভবিষ্যতে আমাদের যেকোনো বিপদে-আপদে পাশে থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্গাপূজার সময় মন্দিরে গিয়ে অনুদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় এই অঞ্চলে বিরল। এটি কেবল ধর্মীয় বা সামাজিক সম্প্রীতির প্রকাশ নয়; বরং রাজনৈতিকভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত হওয়ার কৌশল। এতে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, পারভেজ মল্লিকের এ উদ্যোগ শুধু নির্বাচনী কৌশল নয়। এটি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আস্থা অর্জন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন ও নিরাপত্তা দিতে আমরা যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি তার ক্ষুদ্র অংশমাত্র। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায় একটি উল্লেখযোগ্য ভোটব্যাংক। বিশেষ করে খুলনা-৪ আসনে এই সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ভোটের সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
তারা আরও বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন, যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। তিনি আমাদের দলের সব নেতাকর্মীকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশে থেকে সহযোগিতা করতে বলেছেন। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থেকে ধর্মীয় উৎসবকে আরও আনন্দমুখর করতে চাই।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, বিগত ১৭ বছরে যেসব ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারা আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে, জমি দখল করেছে, নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপি নেতারা সবসময় সজাগ থেকেছে। দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা পাহারার দায়িত্ব পালন করেছে এবং যে কোনো হামলা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে।
জানা গেছে, গত দুদিনে পারভেজ মল্লিক তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় ৩০টি মন্দির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মন্দিরগুলোতে আর্থিক অনুদান প্রদান ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি রূপসা ও তেরখাদা উপজেলার, আলাইপুর বাজার সর্বজনীন পূজা মন্দির, পিঠাভোগ শীতলা তলা নাট মন্দির, ডুবা দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, ডুবা দক্ষিণপাড়া বাসন্তী সর্বজনীন পূজা মন্দির, ডেমরা দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন পূজা মন্দির, কোদাল ধোয়া সর্বজনীন পূজা মন্দির, আজগড়া মহামায়া পূজা মন্দির, চেয়ারম্যানের বটতলা দুর্গামন্দির, আজগড়া মল্লিকবাড়ি সার্বজনীন পূজা মন্দির, প্রগতি যুব সংঘ শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা মন্দির, ভুজনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সর্বজনীন পূজা মন্দির ও ভুজনিয়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, কাকদী সর্বজনীন দুর্গামন্দির, কাকদী দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, দাসপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, দশ ভাইয়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, শ্যামল পূজা মন্দির, হানসনগাতী সার্বজনীন কেন্দ্রীয় দুর্গামন্দির, তেরখাদা পশ্চিমপাড়া দুর্গামন্দির, রাজবংশী পাড়া সার্বজনীন শারদীয় পূজা মন্দির, অরবিন্দু সাহা মন্দির, তেরখাদা সাহাপাড়া সার্বজনীন কেন্দ্রীয় মন্দির ও পানতিতা সরকার বাড়ি দুর্গাপূজা মন্দির পরিদর্শন করেন।
পারভেজ মল্লিক বলেন, প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই বিএনপির রাজনীতি হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, যার মূল লক্ষ্য হল এ দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। বিএনপির কাছে বিদেশি নীতির কোনো স্থান নেই। এই দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলে সাম্য, সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবে—এটাই বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল সব ধর্মের মানুষের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। আমাদের সবার দায়িত্ব হলো—যাতে এই দেশে কোনো মানুষ নিজ ধর্ম পালন করতে গিয়ে আতঙ্কে না থাকে তা নিশ্চিত করা। সবাই যেন উৎসব উদযাপন করতে পারে নিরাপদে, আনন্দে, সম্মানের সঙ্গে, ধর্ম পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন