বিশাল এলাকাজুড়ে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। শাপলার কোমলতায় যেন গ্রামের সরল সৌন্দর্য লুকায়িত। পাশ দিয়ে যিনি যান, তারই চোখ আটকে থাকে শাপলার বিলে, যেখানে শত শত শাপলা ফুটে আছে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে। শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে বিলে ভিড় জমাচ্ছেন তারা।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে বিছিয়ে আছে লাল শাপলার বিল।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া এ বিলটি সাতলার লাল শাপলার বিল নামেই পরিচিত। প্রতিবছর নয়নাভিরাম এ বিলের দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ঘুরতে আসেন হাজারও দর্শনার্থী। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়ান বিলের জলে। ছবি আর সেলফি তুলে বাঁধিয়ে রাখছেন স্মৃতি অ্যালবামে।
জানা গেছে, সাতলার বিলে শাপলা ফুটলেও পর্যটকদের পদচারণা প্রায় এক যুগ ধরে। প্রতি বছর জুলাই মাস থেকেই বিস্তীর্ণ জলাভূমির টলটলে পানির ওপর ভাসতে শুরু করে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা শাপলা ফুল, যা থাকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। পুরো সময়টাতেই লাল শাপলার সমারোহ থাকে বিলজুড়ে। এ সময়টাতে ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনই পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে সাতলা-বাগতা সড়কটি।
ভোরের আলোয় সাতলা বিল পরিণত হয় সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে। বিলের টলটলে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়ায় লাল শাপলা। তারই মাঝে বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ুই পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিল, যা দেখে নিমিষেই দূর হয় পথের ক্লান্তি। তাই লাল শাপলার প্রকৃত রূপ দেখতে সূর্যোদয়ের পর পরই পর্যটকরা ভিড় করছে শাপলার বিলে।
সাতলার বিলে লাল শাপলার সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগের জন্য কমপক্ষে ১৫টি স্পটে রয়েছে চার শতাধিক ছোট-বড় নৌকা। নৌকাযোগে বিলের মাঝে শাপলা দেখতে যান পর্যটকরা। প্রতি ঘণ্টায় নেওয়া হয় ৫০০ থেকে হাজার টাকারও বেশি।
সাতলার লাল শাপলার বিল শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে না। এ বিল ঘিরে কর্মস্থানও গড়ে উঠেছে স্থানীয়ভাবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো পর্যটকদের কাছে ঘর এবং নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন।
সাতলার বিলে ঘুরতে আসা পর্যক কলেজছাত্রী মারিয়া বলেন, আমি বরিশালে থাকি। অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম সাতলার লাল শাপলার বিলের গল্প। এখানে এসে সত্যিই ভালো লাগছে। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগে দেখিনি। তবে এখানকার ফুলগুলো ছিঁড়ে ফেলছে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। এটা না করলে আরও ভালো হতো।
মাদারীপুর থেকে শাপলার বিলে ঘুরতে এসেছেন নবদম্পতি শাহীন ও তামান্না। তারা বলেন, গভীর রাতে বাসে রওনা হয়েছি। এখানে এসে শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়েছে। তবে এখানে পর্যটকদের জন্য হোটেল বা আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আরো অনেক পর্যটক আসতে পারত।
অপরদিক সাতলার বিলে নৌকা ভাড়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন পর্যটক সঞ্জিব এবং অঞ্জলি দম্পতিসহ প্রায় সকল পর্যটক। তারা বলেন, একসময় মাত্র দেড় থেকে দুইশত টাকায় যতক্ষণ মন চায় ঘুরাঘুরি করা যেত। এখন সিন্ডিকেট করে মাত্র ১ ঘণ্টা ঘুরতে হলে দিতে হয় সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে হাজার টাকার বেশি। এ কারণে পর্যটক কমছে বলে দাবি করেন তারা।
তবে যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত নয় বলে দাবি করেছেন নজরুই ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন এবং আরিফসহ অন্য নৌকা চালকরা। তারা বলেন, সাতলার বিল ঘিরে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিন-চার মাস যখন ক্ষেত-খামারে কাজ থাকে না তখন শাপলার বিলে পর্যটকদের নৌকায় ঘুরিয়ে আমরা উপার্জন করছি। তবে শুক্র ও শনিবার পর্যটক বেশি আসে। বাকি পাঁচ দিন তেমন পর্যটক আসে না। তাই ওই দুই দিনে নৌকা ভাড়ায় যা আসে তা দিয়ে আমাদের পুরো সপ্তাহ সংসার চলে। বর্তমানে যে বাজারমূল্য তাতে যা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেটা বেশি না।
সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, লাল শাপলার বিল ঘিরে সাতলায় পর্যটন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোপূর্বে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। এখন বরিশাল থেকে শাপলার বিল পর্যন্ত সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না। সাতলার বিল ঘিরে আরও উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের।
মন্তব্য করুন