রাজশাহীর পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে গিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা। কিন্তু পাখি নয়, তারা দেখলেন কুমির! তাও আবার মিঠাপানির কুমির— যাকে ২০১৫ সালে আইইউসিএন বাংলাদেশ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল।
ঘটনা বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলের। দুপুরে গরু চরাতে গিয়ে ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ প্রথম কুমিরটি দেখেন। কুমিরটি তখন পানি থেকে তিন-চার হাত দূরে। ছবি তুলতে এগোতেই হঠাৎ পানিতে নেমে যায়। খানিক পর মুখ বের করে নিঃশ্বাস নেয়।
রাজু খবর দেন বন বিভাগের কর্মী সোহেল রানাকে। সেখান থেকে খবর যায় বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে। তিনি ফোন করেন আলোকচিত্রী ইমরুল কায়েসকে।
কায়েস ও খাদিজা থাকেন রাজশাহী শহরের কাজীহাটা এলাকায়। পদ্মা নদী তাদের খুব চেনা জায়গা। সেদিন তারা বের হয়েছিলেন লাল মুনিয়ার ছবি তুলতে।
খাদিজা বলেন, ‘রোদের তাপে ক্লান্ত হয়ে ঘাটের দোকানে বসেছিলাম। ঠিক তখনই বন বিভাগের ফোন এলো। ঘুম উড়ে গেল। কুমিরের খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।’
সামনে ছিল কোমরসমান পানি। স্যান্ডেল খুলে ক্যামেরা মাথার ওপরে তুলে পার হলেন দুজন। ভয় ছিল— পা পিছলে না যায়।
বেশ হাঁটার পর পৌঁছালেন ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায়, রাজুর বাড়িতে। রাজুকে সঙ্গে নিয়ে আবার খুঁজতে লাগলেন। কুমির দেখা গেল না। মন খারাপ করে গাছতলায় বসে পড়লেন খাদিজা।
ঠিক তখনই কায়েস ড্রোন উড়ালেন। প্রথমে কিছু দেখা গেল না। একটু পর হঠাৎ কায়েস চিৎকার করে উঠলেন, ‘পাগলি, কুমির!’ দুজন ছুটে গেলেন সেই দিকে।
খাদিজার ভাষায়, ‘জীবনে প্রথমবার প্রকৃতিতে কুমির দেখলাম! কায়েস ভিডিও করছিলেন, আমি ছবি তুলছিলাম। মুহূর্তটা ছিল অবিশ্বাস্য।’
আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এবিএম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) বলেন, ‘২০১৫ সালে মিঠাপানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর পাবনায় ও অন্য কয়েক জায়গায় দেখা গেছে। তবে সম্ভবত এরা ভারতের চাম্বুল নদী থেকে এসেছে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমির রয়েছে— লোনাপানির কুমির, মিঠাপানির কুমির ও ঘড়িয়াল।
রাজশাহীর পদ্মার চরে সেই বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মেলা তাই এক রোমাঞ্চকর বিস্ময়, যেন প্রকৃতি নিজেই ফের জানিয়ে দিল— সে এখনো বেঁচে আছে।
মন্তব্য করুন