

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ও অযত্ন অবহেলায় বেহাল দশা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা মিনি স্টেডিয়ামের। সংস্কারের অভাবে স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। নেই গ্যালারি, বসার জন্য তৈরি বেঞ্চগুলোর অবস্থাও ভঙ্গুর। খেলার মাঠের একটি অংশে স্থানীয়দের নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। ওয়াশরুমে ছাগল পালন করছেন স্থানীয় এক নারী।
জানা গেছে, চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯১৬ সালে মাঠটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালে মিনি স্টেডিয়াম নামকরণ করে একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন, একটি শৌচাগার ও স্টেডিয়ামের পূর্বপাশে বসার জন্য পাকা কয়েকটি বেঞ্চ স্থাপন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। স্টেডিয়ামে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের উন্নয়ন বা সংস্কার বাবদ প্রকল্প গ্রহণ কিংবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেছে, চান্দিনা-শ্রীমন্তপুর সড়কের পাশেই পশ্চিম দিকে তাকালেই নজরে পড়বে কয়েক একর জমির ওপর সুবিশাল মাঠ। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি আসলে একটি স্টেডিয়াম। নেই কোনো সাইনবোর্ড। মিনি স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার ও অবহেলায় গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন থাকলেও নেই কোনো কার্যক্রম। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১৭ সালে ভবনটি নির্মাণ করলেও এখন তা জরাজীর্ণ ও অরক্ষিত। ভবনের চারপাশে ও ভেতরে তৈরি হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শেওলা পড়েছে, ফাটল ধরেছে, ভবনের ভেতরে পরিবেশ দেখলে মনে হয় কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত। অরক্ষিত শৌচাগার, লাইট ও ফ্যান যেন চুরি হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্টেডিয়ামের চারপাশ দিন দিন এটা মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পরে স্টেডিয়ামের আশপাশে আনাগোনা বাড়ে তাদের। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দাবি জানান তারা।
সচেতন মহলের দাবি, চান্দিনার একটি মাত্রই স্টেডিয়াম রয়েছে। স্টেডিয়ামের বর্তমান যে পরিস্থিতি খেলাধুলার মতো পরিবেশ নেই। বড় বড় ঘাস, কাদা ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাচ্চারা এসে যে খেলবে কিংবা কোনো খেলার আয়োজন হবে সেই পরিস্থিতি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিলে স্টেডিয়ামটা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
খেলোয়াড় আবির ও ইমরান অভিযোগ করে বলেন, বিকেলে অনুশীলন করার মতো একটু নিরাপদ জায়গা নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও মাঠের অবস্থা নাজুক। মিনি স্টেডিয়ামটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবহিত করেছি। পৌরসভা থেকে মাঠটি সংস্কার করার কথা থাকলেও আজও হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা বলব।
স্টেডিয়ামের খেলোয়াড় ও চান্দিনা ফুটবল একাডেমির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, এ মাঠে খেলে বাদল রায়সহ অনেকে জাতীয় দল ও দেশসেরা টিমে চান্স পেয়েছে। অথচ স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠের ঘাস অনেক বড় হয়ে গেছে। মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পরগাছা আবর্জনা উঠে ছোট্ট বন সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশেই বাসা বাড়ির ময়লা ফেলে ভাগাড় তৈরি করেছে। যার জন্য খেলাধুলা করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই যার জন্য পানি জমে থাকে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। মাঠে খেলতে আসা খেলোয়াড়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, চান্দিনা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা অধিদপ্তর থেকে কোনো চিঠিও পাইনি। যার কারণে বরাদ্দ হচ্ছে না। স্থানীয় খেলোয়াড়রা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। মাঠ উপযোগী করতে তাদের সবার্ত্মক সহযোগিতা করব।
মন্তব্য করুন