

রংপুরে এক স্কুলছাত্রকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকির দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন— জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির সদস্য রাগিব হাসনাইন (৩০) ও তার সহযোগী ও দলীয় সমর্থক রাকিবুল ইসলাম তুষার (২৮)। এ সময় অস্ত্রও জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে এক স্কুলছাত্রের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এ সময় ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দুজনকে ধরে মারধর করে এবং পরে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দেয়।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কোর্ট পরিদর্শক শাহিন আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, নগরীর পার্ক মোড় এলাকায় কাওছার একাডেমির সামনে দুই স্কুলছাত্রের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এনসিপির রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির সদস্য রাগিব হাসনাইন (৩০) ও তার সহযোগী ও দলটির সমর্থক রাকিবুল ইসলাম তুষার (২৮)। এর আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ মামলার প্রধান আসামি রাকিবুল ইসলাম তুষার। এ সময় রাগিব ঘটনাটি থামাতে কথা কাটাকাটিতে জড়ালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হঠাৎই তুষার কোমর থেকে একটি পিস্তল বের করে এক ছাত্রের মাথায় ঠেকান বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হয়ে দুজনকে ঘিরে ধরে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে তাদের নগরীর তাজহাট থানায় নেওয়া হয়।
এদিকে আটক দুজনকে ছাড়াতে থানায় ভিড় করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এ সময় থানায় উপস্থিত এনসিপির মহানগর সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলাউদ্দিন কাদেরী শান্তি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার অভিযোগ, মব সৃষ্টি করে তাদের কোমরে খেলনা পিস্তল দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনসিপির সমর্থক তুষারের ভাগিনাকে পার্ক মোড় এলাকায় মারধর করা হচ্ছে এমন খবর শুনে তারা সেখানে গিয়েছিল। পরে বিপক্ষের লোক সেখানে মব সৃষ্টি করে তাদের কোমরে খেলনা পিস্তল দিয়ে থানায় এনেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. আব্দুল হাকিম জানান, আগের একটি মারামারিকে কেন্দ্র করে এক ছেলেকে বাইক নিয়ে এসে একদল হামলা চালায় এবং তাকে মারতে মারতে কাওছার একাডেমির সামনে আনে। তখন স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই ভুক্তভোগীর মামা পরিচয়ে দুজন এসে পিস্তল বের করে গুলি করতে চান। পরে সবাই মিলে তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
তাজহাট থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী কালবেলাকে বলেন, আটক দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করেছি। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থলে তুষারের কাছে একটি অস্ত্র পাওয়া গেছে। পরে তাদের দুজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। খালি চোখে দেখে আমার কাছে তো পিস্তলই মনে হচ্ছে। তবে পিস্তলে বুলেট রাখার জায়গায় থাকলেও এ পিস্তলটিতে তা নেই। তবুও আমরা নিশ্চিত হবো, সন্দেহ রাখার কোনো জায়গা নেই। যে-কোনো অস্ত্র রাখা, লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্র রাখা অপরাধ। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অস্ত্র আইনে কঠোর বিধি-বিধান আছে।
মন্তব্য করুন