

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কোলাহলপূর্ণ সুগন্ধা পয়েন্ট। এখানের বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃহদাকার দৈত্য। আকস্মিক দেখায় অনেকের বিভ্রম হতে পারে, এটা আসল নাকি নকল দৈত্য। যাকে ঘিরে আছে উৎসুক জনতা, তবে এটা আসল নয়।
পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম এ দৈত্যটি। মূলত পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতীকী হিসেবে এ প্লাস্টিক দৈত্যটি তৈরি করা হয়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ‘প্লাস্টিক দানব’ প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আলম, বিচ ম্যাজিস্ট্রেট আজিম উদ্দিন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক বলেন, প্রায় চার মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ৮০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যর একটা অংশ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিল্পী এ ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
প্লাস্টিক দৈত্য নিয়ে পরিবেশকর্মী ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ে নদী ও সমুদ্র দূষণের প্রধান নিয়ামক প্লাস্টিক। অপচনশীল এ বর্জ্য মানবজাতিকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করছে। এ প্রেক্ষাপটে মানুষকে এ ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে সচেতন হতে হবে। সমুদ্র সৈকতে তৈরি করা প্লাস্টিক দৈত্যটি মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সারা দেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে, তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।
তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ছয় মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করে যাব। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজনও করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার বলেন, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম) সহ আরও কয়েকটি উপকরণ।
ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি ওসান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ‘প্লাস্টিক দৈত্য’। এটি বানাতে প্রায় ৬ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সমুদ্রসৈকতকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এ উদ্যোগ খুবই কার্যকর ও টেকসই। সমুদ্র বিচরণ করা পর্যটককে সচেতন করতে ভাস্কর্য ও চিত্র প্রদর্শনী অবদান রাখবে। তাতেই উদ্যোগের সফলতা আসবে।
মন্তব্য করুন