‘যা পামু তাই বেশি, পরে তো সব হারামু। হাতি ঠেহানোর জন্য আমগোর নানা কায়দাকানুন করতে অয়। আইতের ঘুম বইলে কিছু থাহে না। এই হাত্তি আমগোর জান মালের জন্য হুমকি। তাই এবার আধা পাহা ধানই টাইডা ফেললাম।’ হাতির আক্রমণে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে না পেরে বারবার ক্ষতির মুখে পড়া শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি এলাকার কৃষক রহিম মিয়া বলছিলেন এমন কথাগুলো। শেরপুর জেলার সীমান্ত ঘেষা পাহাড়ি জনপদ শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ বনভূমির সমতলে আমণ ধান পাকতে শুরু করেছে। শ্রীবরদী উপজেলার টিকরকান্দি থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাতা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ এখন রয়েছে হাতি আতঙ্কে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর ধান পাকার সময় হলেই বন্যহাতির দল হামলে পড়ে লোকালয়ের এই পাকা ধান ক্ষেতে। ফসল বাঁচাতে দিন রাত আগুন ও লাইটসহ দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে দিতে হয় পাহারা। তবে অধিকাংশ কৃষক হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কেটেই ঘরে তুলছেন। কৃষকদের দাবি, পরিমাণে কম পেলেও বড় ধনের ক্ষতির হবে না তাদের। বেশি পাকার জন্য অপেক্ষা করলে এই ফসল হবে হাতির খাবার। গতকাল ২১ নভেম্বর সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক হিমেল চিরান বলেন, আমি ১৫ কাঠা জমি চাষ করেছি। আরও সপ্তাহ খানেক পরে কাটলে সম্পূর্ণ ধান পেকে যেত। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভরসা নেই। কখন যেন হাতি চলে আসে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কৃষক ছাদেক আলী বলেন, অল্প জমি আবাদ করি। গতবার হাতির দল পায়ে পিষ্ট করে সব ধান নষ্ট করেছে। এবার অর্ধেক ধান পাকতেই কেটে ফেললাম। অর্ধেক হলেও তো ঘরে তুলতে পারলাম। এ ছাড়াও গতবার গরুর খাবার হিসেবে খড় পাইনি। এবার খরের অভাব হবে না।
নালিতাবাড়ি উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ হাতির ক্ষতির জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিবে। রেকর্ডভুক্ত জমিতে ফসলের ক্ষতি হলে তাদের আবেদন করতে হবে। পরে যাচাই বাছাই করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আশি ভাগ ধান পাকার পর কৃষক ধান কেটে নিয়ে আসবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আধা পাকা ধান কাটলে পরিমাণে ধান কম পাওয়া যাবে। তবে সতর্ক অবস্থানে থেকে আশি ভাগ পাকার পর ধান কাটার পরামর্শ তার।
মন্তব্য করুন