ঝিনাইদহ ব্যুরো
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৭ পিএম
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইসির নতুন মামলার পর ভোটের মাঠে নেই হাই ও তার সমর্থকরা

ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, চেয়ারম্যান ইকু শিকদার ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা। ছবি : কালবেলা
ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, চেয়ারম্যান ইকু শিকদার ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা। ছবি : কালবেলা

আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে দ্বিতীয় দফায় মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপিসহ তার সমর্থক প্রভাবশালী চার নেতা। নির্বাচন কমিশন বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) নতুন করে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে। একটি মামলায় শুধু এমপি হাইকে আসামি করা হয়। অপর মামলায় আসামি করা হয়েছে-শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিম, হাকিমপুর ইউনিয়ন চেয়্যারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান ইকু ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যাকে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা নতুন মামলার পর ভোটের মাঠে নেই নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই ও তার সমর্থকরা।

মামলা দায়েরের পর পরই তারা এলাকাছাড়া হয়েছেন। ভোটের মাঠে তাদের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বরও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে হাই ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করে ইসি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এমপি হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গত সোমবার আব্দুল হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার আলোকে গতকাল দুটি মামলা করে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. তায়জুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান। এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় অপরাধীদের ছাড় না দেওয়ায় এবং প্রশাসনের জিরো টলারেন্স ভূমিকায় শৈলকুপার সাধারণ ভোটারদের মাঝে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে।

ভোটাররা জানান, শৈলকুপায় নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতারা ও ক্যাডার বাহিনী সাধারণ ভোটারদের নৌকার পক্ষে ভোট করতে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না। তাদের মতের বিপক্ষে যাওয়ায় নৌকার অনুসারী ক্যাডার বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এমনকি নৌকার বিপক্ষে ভোট করলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের এলাকা ছাড়া করা হবে বলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল।

ভোটাররা আরও জানান, এমপি আব্দুল হাইসহ প্রভাবশালী চার আওয়ামী নেতার বিরুদ্ধে ইসি মামলা করার খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে পরপর চারটি মামলা হওয়ায় এবং এসব মামলায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার অভিযানের ফলে আসামিরা এখন গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। সকল ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে শৈলকুপার সাধারণ ভোটাররা মুক্তি পাবে বলে আশা করছে। ভোটগ্রহণের আগেই যদি প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করে তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে সকলে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার জানান, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সহিংসতা করে জোর-জবরদস্তি ভোট আদায় করতে চাচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু তদারকিতে এবার আর সন্ত্রাসী দিয়ে সুষ্ঠু ভোটের কার্যক্রম সে ব্যাহত করতে পারছে না। কমিশন যদি ভোট গণনা পর্যন্ত এ ধরনের শক্ত অবস্থান বহাল রাখে তাহলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচনের আচরণবিধি যিনিই লঙ্ঘন করবে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা যে কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।

জানা যায়, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপি ও তার সমর্থকেরা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকি প্রদান, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়াসহ এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত করে ইতিমধ্যে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি একাধিক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে এমপি হাই ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের একাধিক সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী ইসির নির্দেশনার আলোকে গত ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকূপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তায়জুল ইসলাম। একটি মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। আব্দুল হাই ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম ও সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন।

প্রথম দফায় মামলা করার পরও বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে এমপি আব্দুল হাই ও তার সমর্থকরা। এ অবস্থায় গত ২২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে পৃথক অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত সোমবার এসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন নির্বাচন কমিশন।

ওই নির্দেশনার আলোকে মঙ্গলবার আব্দুল হাই ও শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন করে পৃথক দুটি মামলা করে। আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই গত ১৬ ডিসেম্বর শৈলকুপার মির্জাপুর ইউনিয়নের চড়িয়ারবিল বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করে ছবি ভাঙচুর এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১)(ক) এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। অভিযুক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধান লঙ্ঘনের দায়ে আমলযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় অনুচ্ছেদের ৭৩ এর অধীনে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অপর মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিম, হাকিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান ইকু ও শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা ঝিনাইদহ-১ প্রাপ্ত নির্বাচনী এলাকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল হাইয়ের সমর্থক। গত ২৪ ডিসেম্বর তারা তাদের ইউনিয়নের কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের কোনো পোস্টার সাঁটাতে দিচ্ছেন না এবং কোনো প্রচারের মাইক প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না মর্মে অভিযোগ করা হয়। একই তারিখ শৈলকুপা পৌরসভার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক মিলনায়তনে প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের পক্ষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণের জন্য ২৫০ প্যাকেট বিরিয়ানি ইকু শিকদারের বাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি জব্দ করে। উক্ত সমর্থকগণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৭ (১) (ক) এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১০(চ) এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ ৩৫ এর অনুচ্ছেদ ৭৭(১) (ক) এর বিধান লঙ্ঘনের দায়ে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

একাত্তরের ইস্যুর সমাধান চাইল এনসিপি

রাজধানীতে তামাকের বিরুদ্ধে ‘ইয়ুথ মার্চ’

বুড়িগঙ্গা নদী থেকে নারী-শিশুসহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার

ত্রিবার্ষিক সম্মেলন / আবারো জামালপুর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে শামীম-মামুন

দাবি আদায় ছাড়া ঘরে না ফেরার ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীর

লিডসের বিরুদ্ধে আর্সেনালের গোল উৎসব

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত: জোনায়েদ সাকি

এনসিপির কর্মকাণ্ডে ফিরছেন সারোয়ার তুষার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার 

সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

১০

৪৫ বছর ভাত না খেয়েও সুস্থ ও সবল বিপ্লব

১১

চেতনানাশক খাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতি

১২

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

১৩

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

১৪

নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে চাকরি খোয়ালেন বেরোবি সমন্বয়ক

১৫

হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষক বদলির তদবির আসে ওপর থেকে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৬

জয় স্যুটকেস ভরে টাকা নিয়ে গেছে : সোহেল

১৭

২৫ বছর ধরে বাঁশির মায়ায় আটকে আছে শফিকুলের জীবন

১৮

একাত্তরেও আ.লীগ পালিয়েছে, এবারও পালিয়ে গেছে : টুকু

১৯

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু, শেষ হচ্ছে কবে

২০
X