প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৯ এএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঘন কুশায়ায় আলুক্ষেতে পচারি রোগের প্রাদুর্ভাব

রোগাক্রান্ত আলু ক্ষেতে চিন্তিত কৃষক। ছবি : কালবেলা
রোগাক্রান্ত আলু ক্ষেতে চিন্তিত কৃষক। ছবি : কালবেলা

বগুড়ায় ঘন কুশায়ার কারণে আলুক্ষেতে লেটব্লাইট বা পচারি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের হিসাবমতে প্রায় তিনশ হেক্টর জমি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষক চিন্তিত হয়েছে পড়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার বগুড়ার ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবার ছিল যা ৫৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর। এই হিসাবে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ বেশি হচ্ছে।

জেলার সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এবার সেখানকার কৃষক ১৮ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে চাষ করছেন। আলুর গাছও বেশ তরতরিয়ে বেড়ে উঠছিল। ফলে দাম বৃদ্ধির বছরে খুশির ঝিলিক দেখা দেয় কৃষকের চোখে। তবে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে পচারি রোগ। এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এ রোগ হানা দিয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে বিহার, ধামাহার, গুজিয়া, মোকামতলা, বুড়িগঞ্জ, আটমুল, পৌর এলাকার সুলতানপুর নয়াপাড়া গ্রামের মাঠেই এ রোগেই আক্রান্ত জমির পরিমাণ বেশি। এসব এলাকার কৃষক এখন দিশেহারা। তারা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও রোগ দমন করতে পারছেন না। তাদের মতে কীটনাশকগুলোই ভেজালে ভরা।

রায়নগর ইউনিয়নের ফাঁসিতলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন তিনি। গাছ বেড়ে উঠছিল সুন্দরভাবেই। কিন্তু পাঁচ-ছয় দিন আগে হঠাৎ পচারি রোগ দেখা দেয়। এরই মধ্যে তার এক বিঘা জমির গাছ মরে গেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কীটনাশক ছিটিয়েও রোগ সারছে না।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘড়ি মহল্লার কৃষক ছামসুল আলম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে আলুক্ষেতে। ফলে গাছে পচন ধরেছে। এতে তারা শঙ্কিত।

তিনি আরও বলেন, এবার আলুবীজের দাম বেশি ছিল। সারসহ প্রতি বিঘায় আলু চাষ করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোগের কারণে উৎপাদন কমে যাবে। এতে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তার ধারণা, বাজারে ছড়িয়ে পড়া নকল ওষুধের কারণেই এবার কোনো কাজ হচ্ছে না।

নুনগোলা ইউনিয়নের কৃষক আকবর আলী বলেন, এরই মধ্যে তার ২৫-৩০ শতক জমিতে রোপা আলুগাছে পচন ধরেছে। লেটব্লাইট বা পচারি রোগের কারণেই এমন পরিণতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। প্রতি বছরই এ রোগে কমবেশি ক্ষতি হয়। তবে অন্যান্য বার কীটনাশকে সেরে গেলেও এবার কাজ হচ্ছে না। তার ধারণা, ভেজাল কীটনাশকের কারণে আলুর এ রোগ সারছে না।

বগুড়ার সদর উপজেলার পীরগাছা এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তিন দিন পরপর ওষুধ দিচ্ছি, কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন জমি আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগের কারণে ফলনও কম হচ্ছে।’

একই এলাকার কৃষক সালাম শেখ বলেন, এবার আলুর জমিতে পঁচারি রোগ আক্রমণের পরিমাণ বেশি। ওষুধ স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না। ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধের কারণেও এমন হতে পারে, পরামর্শের জন্যে কৃষি বিভাগের কাউকে পাওয়া যায় না।

কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাও এ দাবির সঙ্গে একমত। তারা বলছেন, নানা প্রকার কোম্পানি ফসলের রোগ সারাতে কীটনাশক বিক্রি করে। তবে সব কোম্পানির ওষুধ ভালো নয়। কিছু নিম্নমানের কোম্পানি কম দামে ওষুধ বা কীটনাশক বিক্রি করছে। তা দিয়ে ফসলের রোগ সারছে না।

এ রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির জন্য আবহাওয়াজনিত কারণের পাশাপাশি নিম্নমানের বীজ ব্যবহারকে দায়ী করেন শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মুজাহিদ সরকার। তার ভাষ্য, এ রোগ দমনে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ওষুধ নিয়ম মেনে ছিটাতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে নিম্নমানের কীটনাশক বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলবুর রহমান বলেন, ফসলের রোগ সারাতে কৃষকদের ভালো কোম্পানির মানসম্মত ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তার পরও অনেকে কম দামি ওষুধ ব্যবহার করেন। অনেকে সঠিকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন না। ফলে রোগ সারছে না।

নকল ওষুধ বন্ধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয় বলেও দাবি করেন তিনি। কৃষি কর্মকর্তা মতলবুর রহমানের ভাষ্য, লেটব্লাইট রোগ সারাতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে বলছেন। তিনি স্বীকার করেন, এ রোগের কারণে আগাম জাতের আলু উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিএনপির দুই দিনব্যাপী হেলথ ক্যাম্প

৩১ দফা বাস্তবায়নে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান আমিনুল হকের

শীতের শুরুতেই নিওরের স্কিনকেয়ার পণ্যের উচ্চ চাহিদা

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় শিবিরের দোয়া মাহফিল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৩

এশিয়ান টাউনস্কেপ পুরস্কার পেল রাজউক

৭ ভূমিকম্পে কাঁপছে দেশ, কী চলছে মাটির নিচে

রামেকে দেশের প্রথম সাপে কাটা ওয়ার্ড চালু, এক মাসে মৃত্যু শূন্য

নারী উদ্যোক্তা তনিকে মানহানি, গ্রেপ্তার আকাশ কারাগারে 

ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

১০

নিজের নির্বাচনী আসন ও দল নিয়ে যা জানালেন আসিফ মাহমুদ

১১

শ্রীলঙ্কায় ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধস-বন্যা, নিহত ৪০

১২

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির কঠোর নির্দেশনা

১৩

স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যায় মামলা, প্রধান আসামি কারাগারে

১৪

‎২২ ডিসেম্বরেই জকসু নির্বাচন চান জবি ছাত্র অধিকার পরিষদ

১৫

পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট গেল বাংলাদেশের

১৬

সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

১৭

শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় শুরু

১৮

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ফের পরিবর্তন, বাড়ল না কমলো?

১৯

দেশের নারী সমাজ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল : সেলিমা রহমান

২০
X