বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল থেকে জয়শ্রী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় তিন হাজার বিভিন্ন প্রজাতের গাছ কেটে লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওই মহলটি মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় কিংবা আইনি ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি জানতে পেরে বরিশাল সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ ৫০টি কাটা গাছ জব্দ করেছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপবিভাগীয় বৃক্ষ পালনবিদ ঢাকা অফিসের মিরপুরস্ত পাইকপাড়ার সওজ উপবিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ (অ. দা.) মো. আমানত আলী স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ দেখিয়েছেন। গৌরনদী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সির মালিকানাধীন এলাহী এগ্রো এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ওই ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. হাবুল বেপারী নেতৃত্বে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল থেকে জয়শ্রী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় তিন হাজার বিভিন্ন প্রজাতের গাছ কেটে লুট করে নেওয়া হয়। আরো কয়েক কোটি টাকার গাছ লুটের চেষ্টা অব্যাহত ছিল।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, আমি বিষয়টি ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের বৃক্ষপালনবিদের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুকুট মো. আবু সাঈদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সড়ক ও জনপদ কার্যালয় থেকে কোনো গাছ কাটার টেন্ডার হয়নি। এমনকি এলাহী এগ্রো এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে যে ওয়ার্ক অর্ডারটি দেখানো হয়েছে সেটিও ভুয়া। তাৎক্ষণিক সড়ক ও জনপদের বরিশাল উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অরুন কুমার বিশ্বাসকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তিনি প্রায় ৫০টি কাটা গাছ জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। গাছ লুটের ওই চক্রটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নির্বাহী প্রকৌশলী উল্লেখ করেছেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অরুন কুমার বিশ্বাস বলেন, যে কার্যাদেশ বলে গাছ কেটে লুট করা হচ্ছিলো আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই কার্যাদেশটি ভুয়া। এর আগে ওই চক্রটি কোটি টাকার প্রায় শতাধিক গাছ কেটে লুট করেছে।
গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হাবুল বেপারী বলেন, আমি সড়ক ও জনপদের ঢাকা অফিসের সহকারি মো. আরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে গাছ কাটার অনুমতি নিয়েছি। এলাহী এগ্রো এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে গাছ কাটার ওই ওয়ার্ক অর্ডারটি যে ভুয়া তা আমি বুঝতে পারিনি।
এ ব্যাপরে অভিযুক্ত সড়ক ও জনপদের ঢাকা অফিসের সহকারী আরিফুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফোন রিসিফ হয়নি।
তবে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাখাওয়া হোসেন বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর অংশে গাছ কাঁটার কোনো কার্যাদেশের অনুলিপি আমি পাইনি।
এ ব্যাপারে এলাহী এগ্রো এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধীকারী গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি বলেন, আমি গাছের ব্যবসা বুঝি না এবং গাছের ব্যবসা করি না। আমি কোনো গাছের টেন্ডারেও অংশগ্রহণ করিনি। শুনেছি হাবুল বেপারী নামের এক ইউপি সদস্য আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এ কাজটি করেছে। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করায় আমি গৌরনদী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছি।
মন্তব্য করুন