সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘরে আয়োজিত মাসব্যাপী লোকজ উৎসব ও কারুশিল্প মেলা।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরের পর থেকে অনেকেই মেলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী এ উৎসবে আসেন। ছুটির দিন উপলক্ষে মেলায় আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেলা ও উৎসব।
বিলুপ্তপ্রায় বাংলার লোক ও কারুশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিপণন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক এবং কারুশিল্প ফাউন্ডেশন মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের আয়োজন করেছেন। ১৯৯১ সাল থেকেই মাসব্যাপী এ লোকজ মেলার আয়োজন করে আসছেন ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ কর্মরত কারুশিল্প প্রদর্শনীতে উৎসুক দর্শনার্থীর প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীরা এ উৎসব চত্বরে তাদের কারুপণ্য তৈরি ও বিক্রি করছেন। সাধারণ মানুষ এ কারুপণ্য তৈরির কলাকৌশল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।
লোকজ এ মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, নতুন প্রজন্মকে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পরিবার নিয়ে লোকজ মেলায় এসেছি। তাদের বিলুপ্ত প্রায় একতারা, বাঁশি, বায়োস্কোপ, কাঠের পুতুল, নকশিকাঁথাসহ আমাদের আদি ও অকৃত্রিম শিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং লোকগান শুনতে মেলায় এসেছি।
মেলায় ঢাকার মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে আসা জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, শহরের অট্টালিকায় এবং কর্মব্যস্ততায় আমরা আজ বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছি। তাই আজ ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে গ্রামবাংলার সচিত্র দেখতে এ মেলায় এসেছি। প্রতিবারই এ মেলায় আমরা আসি। এখানে আসলে আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে খুঁজে পাই।
মেলায় আগত কারুশিল্পীরা জানান, ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায় বিক্রিও বেড়েছে। আগের তুলনায় আমাদের হস্তশিল্পের চাহিদা এবার অনেক বেশি।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, এবার মেলায় সাধারণ স্টল ও কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ সর্বমোট ১০০টি স্টল রয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
এ বছর মৌলভীবাজার ও ঝালকাঠীর শীতল পাটি, মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁ, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশ বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া-পুতুল, বন্দরের রিকশা পেইন্টিং, কুমিল্লার, তামা-কাঁসা-পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীসহ মোট ১৭ জেলার কারুশিল্পীরা মেলায় অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার জানান, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন। আমরা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ পুরো ফাউন্ডেশনকে সিসিটিভির আওতায় রেখেছি। একদল স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উৎসব প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে। এ মেলায় প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা তবে বিকেল ৫টার পর সর্বসাধারণের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন