সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন সমতলে বাড়ছে পাহাড়ি কাঁঠালের চাহিদা। আম-লিচুর পরে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে কাঁঠাল। মৌসুমের শেষ দিকে এসেও কাঁঠালে ঠাঁসা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজার। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাটবাজারে সব থেকে বড় জায়গা দখল করেছে জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’।
খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে গুইমারা ও মাটিরাঙ্গায়। সপ্তাহের দুই দিন মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজারে জমে উঠে কাঁঠালের হাট। সপ্তাহের মঙ্গলবারে গুইমারা আর শনিবারে মাটিরাঙ্গায় কাঁঠালের বড় হাট বসে।
শনিবার হাটবার হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন জেলার সর্ববৃহৎ এ কাঁঠালের বাজারে। অন্যদিকে সোমবার সকাল থেকে গুইমারা বাজারে আসতে শুরু করে কাঁঠাল। এ দুই দিন মাটিরাঙ্গা ও গুইমারায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের বিশাল অংশজুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।
শনিবারের হাটবারকে সামনে রেখে মাটিরাঙ্গায় এসে জড়ো হন নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। তারা ট্রাকে ট্রাকে কাঁঠাল নিয়ে যান সমতলের জেলাগুলোয়। সমতলের জেলাগুলোয় পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা ব্যাপক বলে জানান বাজারে আসা এসব পাইকাররা।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার কাঁঠালের এ হাট ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পাইকার ও বাগানীরা কাঁঠালের স্তূপ সাজিয়ে বসে আছেন। প্রতিটি স্তূপে রয়েছে শত শত কাঁঠাল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে কিনছেন।
স্থানীয় বিক্রেতা আর পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমতলে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা থাকায় তারা অনেকটা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ের কাঁঠাল। তবে সমতলের চাহিদা থাকলেও কাঁঠালের দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।
মাটিরাঙ্গা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় এ কাঁঠালের হাটে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ ছাড়াও লোগাং, তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ি, মাইসছড়ি ও ভুয়াছড়ি থেকে ট্রাক এবং চাঁদের গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন স্থানীয় খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে। সমতলের জেলাগুলোয় এ কাঁঠালের দাম তিনগুণেরও বেশি।
মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল বিক্রেতা মো. নুর নবী জানান, মৌসুমের শুরুতেই তিনি বিভিন্ন বাগান ক্রয় করেন। পরে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে থাকেন। এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন। নোয়াখালী থেকে আসা পাইকার আব্দুল হক ও আনোয়ার হোসেন বলেন, কলা-আম-লিচুর মতো পাহাড়ি জেলার কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সমতলের বিভিন্ন জেলায়। খাগড়াছড়ির কাঁঠালে নোয়াখালী ও আশপাশের জেলায় কাঁঠালের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে শতাধিক ট্রাক কাঁঠাল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এ ছাড়াও গাড়িতে কাঁঠাল লোড-আনলোডসহ অন্যান্য কাজে অন্তত ২০০ শ্রমিক নিয়োজিত থাকায় শ্রমিকদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।
তবে খাগড়াছড়িতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা গেলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফল সংরক্ষণ করে আরও ভালো দাম পেতেন জানিয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা স্থানীয় বাগানিদের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও তা বাস্তবায়নে সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় তারা হতাশ।
মন্তব্য করুন