বগুড়ায় তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আবু ছাইদের ওপর ভীষণ চটেছেন সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক।
সোমবার দুপুরে প্রতীক বরাদ্দ নিতে গিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তার (রিটার্নিং) ওপরে চটেছেন।
এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করবেন বলেও হুমকি দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পোস্টার-ব্যানার লাগানো হলেও সেসব অপসারণ করা হয়নি। বারবার বলার পরও নির্বাচন কর্মকর্তা এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে তিনি পক্ষপাতিত্ব করছেন।’
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আবু ছাইদ জানিয়েছেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর বসে তাকে কথা বলতে বললেও তিনি সেটি না করে প্রতীক বরাদ্দের মাঝখানেই কথা বলতে শুরু করেন। অথচ ইতিপূর্বে তিনি মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পোস্টার-ব্যানার অপসরণে মাঠে কাজ করছেন।’
সোমবার দুপুরে বগুড়া জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ শুরু হয়। কর্মসূচির শুরুতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বাগত বক্তব্য দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের কথা বলতে গেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সুফিয়ান সফিক তার মাঝেই কথা বলতে শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, রিটার্নিং কর্মকর্তা আইন মানছেন না।
তিনি বলেন, ‘আপনারা আইন না মানলে পরে আমরা কোন আইন ভঙ্গ করলে কিছু বলতে পারবেন না।’ এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন বিষয়ে আইন মানা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বার বার বলার পরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আগে থেকেই লাগানো পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করা হয়নি। তাদের পোস্টার ব্যানারের পাশাপাশি বিলবোর্ড পর্যন্ত রয়েছে।’
এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি, আপনারা আইনের মধ্যেই থাকেন।’ এ সময় সফিক ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে চেনেন না। আমি আপনার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে কমপ্লেন (অভিযোগ) করবো। আপনি আমার কথার সঙ্গে আবার ডিফার করছেন। নিজেরা আইন মানছেন না, পক্ষপাতিত্ব করছেন।’
এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন প্রতীক বরাদ্দ চলছে। এই পর্ব শেষ হলে আপনার সঙ্গে বসে কথা শুনবো।’ তখন সফিক আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে বসার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা। আমি বলেছি কমপ্লেন করবো, অবশ্যই সেটা করবো। যেন আপনাকে পরিবর্তন করা হয়।’
পরে প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে বাইরে এসে আবু সুফিয়ান সফিক সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক দফা বৈঠকে নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আগে থেকেই লাগানো পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড আপসারণ করতে বলা হলেও তারা কোন কর্ণপাত করছেন না। এতে করে মনে হচ্ছে তারা প্রতিপক্ষের প্রতি পক্ষপাত করছেন। এ কারণে আমি বিষয়টি কমপ্লেন আকারে নির্বাচন কমিশনকে জানাব।’
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আবু ছাইদ বলেন, ‘তিনি তার অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে লিখিত কিছু জানাননি। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকে তিনি মৌখিকভাবে পোস্টার ব্যানার ও বিলবোর্ড থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন থেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেসব অপসারণে কাজ করছেন। তারপরও তিনি একই অভিযোগ করছেন। তাঁকে বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’
বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আবু সুফিয়ান সফিক ঘোড়া প্রতীক, সুলতান মাহমুদ খাঁন রনি মোটরসাইকেল এবং শুভাশীষ পোদ্দার লিটন আনারস প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন