কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেংছড়ি পাটুয়ারটেক মেরিন ড্রাইভ সড়কে গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সাত লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় গাড়িতে থাকা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আমিন ও তার ভাগনে আব্দুল্লাহসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয়েছে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত বিলাসবহুল পাজেরো স্পোর্টস কার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- টেকনাফ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ডেইলপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল আমিন (৪০), গোদারবিল এলাকার আবু সৈয়দের ছেলে ও আটক আব্দুল আমিনের ভাগনে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (৩৫), একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে নুরুল আবসার (২৮) এবং ডেইল পাড়া এলাকার মৃত দীল মোহাম্মদের ছেলে জাফর আলম (২৬)।
দুপুরে র্যাব-১৫ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫ এর সিও লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে মাদক সম্রাট আব্দুল আমিন তার সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে বিলাসবহুল গাড়িতে করে মাদকের একটি চালান কক্সবাজার শহরের দিকে পাচার করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত ২টার দিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাটুয়ারটেক মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে মাদক উদ্ধারের বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে টেকনাফ থেকে আসা একটি কালো রঙের বিলাসবহুল প্রাইভেটকারকে থামার সংকেত দিলে তারা দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তল্লাশি করে গাড়ির পেছনে বিশেষ অবস্থায় রাখা ৭ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইয়াবা সম্রাট আব্দুল আমিন ও তার ভাগনে আব্দুল্লাহকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল আমিন এবং মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। আর নুরুল আবছার সম্পর্কে মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ভগ্নিপতি। আব্দুল আমিন ও আব্দুল্লাহ পারিবারিকভাবে মুদির ব্যবসা এবং গরুর হাটের ইজারাদারি ব্যবসা করত। একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু চোরাচালান করত। এ সময় অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তারা। মামা ভাগনে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে শুরু করে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে গরু ও মুদির ব্যবসার পাশাপাশি পলিথিন ও কার্পেট ব্যবসা শুরু করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আবদুল্লাহ সিন্ডিকেটে আরও যাদের নাম এসেছে তারা হলেন, আব্দুর রহিমের ছেলে তজিল আহমেদ, মো. হোছন এর ছেলে মো. কাদের, মৃত জাহেদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৭), কলা মিয়ার ছেলে সৈয়দ কাশেম, তার ভাই মো. কাশেম এবং মনিরুজ্জামানের ছেলে আব্দুর রহিমসহ ডজনের অধিক সদস্য। আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ১০টির অধিক মাদক মামলা রয়েছে। দৈনিক কালবেলায় আব্দুল আমিন, আব্দুল্লাহ ও আব্দুল কাদেরকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এ সিন্ডিকেটের প্রধান বার্মাইয়া সিরাজ ইয়াবার বিশাল চালান সমুদ্রপথে ট্রলারযোগে আব্দুল আমিনের কাছে পৌঁছাত। পরে এসব ইয়াবা নিজের হেফাজতে মজুদ করার পর সময় বুঝে মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত আব্দুল আমিন এবং আব্দুল্লাহ সিন্ডিকেট। উদ্ধারকৃত ইয়াবার চালানটি তাদের এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দিতে কক্সবাজারে আনা হচ্ছিল। গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল আমিন ও কাদেরের বিরুদ্ধে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকসহ ১১টির অধিক মামলা রয়েছে।
র্যাবের সিও বলেন, কতিপয় সংঘবদ্ধ চক্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে সমুদ্রপথে মাছ ধরার ট্রলার দিয়ে অভিনব পন্থায় ইয়াবা এনে তা সুযোগ মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে। মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৪৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।
মন্তব্য করুন