জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০৮:২৩ এএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ০৯:১৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ছয় বছরে দুই পিলার

ছয় বছরে নির্মাণ হয়েছে মাত্র দুটি পিলার। ছবি : কালবেলা
ছয় বছরে নির্মাণ হয়েছে মাত্র দুটি পিলার। ছবি : কালবেলা

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর দুই বছরের কাজ ছয় বছরে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র দুটি পিলার। বাকি ৩টি পিলারের নামেমাত্র কিছু অংশ করা হলেও ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে সেতুটির নির্মাণকাজ। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। এখনো তাদের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা।

জানা গেছে, সিঙ্গাইর ও কেরানীগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে দুই পাড়ের জনদুর্ভোগ দূর করতে উপজেলার চান্দুহর গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু ছয় বছরেও নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ। সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭/১৮ অর্থবছরে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপজেলার চান্দুহর গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। এতে ৩৪ কোটি ৮৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩০ টাকা দরে ৩১৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটির কাজটি পায় একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে পারেনি। পরে নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কাজটি দেওয়া হয় জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে। এতেও দৃশ্যমান হচ্ছে না জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি। জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডও কয়েকমাস ধরে কাজ বন্ধ করে রাখায় সেতু নির্মাণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ছয় বছরে ৩১৫ মিটার সেতুর দুই প্রান্তের অ্যাবাটমেন্ট ও উইং ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। অপরদিকে ৫টি পিলারের মধ্যে দুটি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘদিনেও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। এতে করেই পারাপার হচ্ছে ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। হাজার হাজার বিঘা জমির উৎপাদিত ফসল ঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

চান্দহর বাজারের ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, প্রতিদিন আমাকে এ নদীর ওপর দিয়ে চারবার পার হতে হয়। আমাদের মতো কষ্ট এ উপজেলায় আর কেউ করে কি না আমার জানা নাই। এখানে কার গাফিলতিতে সেতুটির কাজ হচ্ছে না, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো অবস্থা থাকে না। তা ছাড়া স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হয়ে যাতায়াত করে। সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি।

স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, এ সেতু না হওয়ায় আমরা অনেক অসুবিধার মধ্যে আছি। বর্ষাকালে ভরা নদীতে খেয়া পারাপার হতে অনেক ভয় লাগে। এখন গরমের মধ্যে একটি খেয়া মিস করলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। তখন এত খারাপ লাগে, যা বলে বোঝানো যাবে না। তাই আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণকাজ যেন শেষ হয়, সে ব্যবস্থা করা হোক।

চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল বলেন, কাজটি প্রথমে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান করে। কিছু কাজ করে তারা চলে যায়। পরে আবার দেড় দুই বছর ধরে নতুন আরেক কোম্পানি কাজ নেয়। তারাও কাজ ধরে তো ধরে না। করে তো করে না। এখন কাজ চলছে। কিন্তু ধীরগতিতে। আমি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সব জায়গায় বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে এ কাজের ব্যাপারে বলিনি। এর ভেতর দেখতে দেখতে ছয় বছর চলে গেল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব বিপদে আছি এ সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা হোক। সেতুটির কাজ হয়ে গেলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পন্ন হবে।

সিংগাইর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রথমে আমরা এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম। তারা কাজটি করেনি। পরে আবার রি-টেন্ডার করেছি। প্রথম পর্যায়ে বর্ষার কারণে কাজ করার পরিবেশ ছিল না। এখন কাজ করার পরিবেশ আছে। ঠিকাদার কাজ করছে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে কাজটার গতি আরও হলে ভালো হতো।

তিনি বলেন, কাজের গতি কম। তবে ঠিকাদার যদি পর্যাপ্ত মালামাল এবং লোকবল নিয়ে আসে তাহলে আশা করছি সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিচ্ছি, ফোন দিচ্ছি এবং আমাদের দপ্তরের বিভিন্ন শাখা থেকেও তাকে জানানো হচ্ছে। আশা করছি সঠিক সময়ে হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে বার বার চেষ্টা করেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফের ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান

ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কমিউনিটি ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষর

বিরোধীরা আমার মৃত মাকে গালিগালাজ করেছে : মোদি

মাসোহারা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল শেখ হাসিনা : টুকু

সরকারের দৃঢ়তা স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের শঙ্কা কাটবে না : মঞ্জু

স্পনসর ছাড়াই এশিয়া কাপে নামতে পারে ভারত

নীলফামারীতে শ্রমিক হত্যায় জামায়াতের বিবৃতি

টি-টোয়েন্টি থেকে ওয়ানডে ইনিংস : পূর্ণ মেয়াদে বিসিবি চালাতে চান বুলবুল

ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না : ফিরোজ

১০

ব্যাংক এশিয়ার পাওনা পরিশোধ এক্সিম ব্যাংকের

১১

সরকারি চাল বিক্রির অভিযোগে বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

১২

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লুট হওয়া অস্ত্র জমার নির্দেশ চবি প্রশাসনের

১৩

চবিতে সংঘর্ষ : ১ হাজার ৯৫ জনকে আসামি করে মামলা

১৪

নুরকে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

১৫

প্রাণঘাতী বন্যাকে ‘আশীর্বাদ’ বললেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

১৬

পতিত আ.লীগ ভারত থেকে গুজব ছড়াচ্ছে : মির্জা ফখরুল

১৭

রাজধানীতে মসজিদের আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৮

স্ত্রী-সন্তানের পর চলে গেলেন সোহেলও

১৯

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

২০
X